ফাইল ছবি

চট্টগ্রামে আগস্ট মাসে এসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। আগস্ট মাসে চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ হাজার ৪৫৫ জন। এর মধ্যে নগরের ১০ হাজার ১৪০। আর বিভিন্ন উপজেলার ৬ হাজার ৩১৫ জন। একই সময়ে মারা গেছেন ২৫৪ জন। এর মধ্যে নগরীর ১০৫ আর বিভিন্ন উপজেলার ১৪৯ জন।

এর আগের মাস জুলাইয়ে জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৩ হাজার ৫৭০ জন। যা জেলায় একমাসে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড। জুলাই মাসে করোনায় চট্টগ্রামে মারা গিয়েছিলেন ২৬৭ জন। 

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, আগস্টের ১ তারিখ থেকে ৩১ তারিখ পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ হাজার ৩৮২ জন, যা একমাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড। আক্রান্তদের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর ১০ হাজার ৬৭২ জন। আর নগরীর বাইরে বিভিন্ন উপজেলার ৬ হাজার ৭১০ জন। আগস্ট মাসেও চট্টগ্রামের গ্রাম থেকে শহরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। 

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামে আগস্ট মাসে মারা গেছেন ২৬৫ জন, যা একমাসে  দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর ১১১ জন আর চট্টগ্রাম নগরের বাইরের। অর্থাৎ, বিভিন্ন উপজেলায় মারা গেছেন ১৫৪ জন। চট্টগ্রামে আগস্টে নগরীর চেয়ে গ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। 

আর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জুলাই মাসে মারা গেছেন ২৬৭ জন। যা একমাসে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। জুলাই মাসে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৩ হাজার ৫৭০ জন। 

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চট্টগ্রামে জুলাইয়ের মাসের তুলনায় আগস্টে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কমলেও মৃত্যুর সংখ্যা তেমন কমেনি। আবার করোনা আক্রান্ত হয়ে গ্রামে মৃত্যুর হার এখনও অনেক বেশি। সেই সাথে চট্টগ্রামে নগরীতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। 

চট্টগ্রামে গতবছরের ৩ এপ্রিল প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। প্রথম মাসে অর্থাৎ ২০২০ সালের এপ্রিলে মোট শনাক্ত হয় ৭৩ জন। পরের মাসে (মে) দুই হাজার ৯১২ জন, জুনে পাঁচ হাজার ৮৮৩ জন, জুলাইয়ে পাঁচ হাজার ৮৫৮ জন, আগস্টে দুই হাজার ৭১৪ জন, সেপ্টেম্বরে এক হাজার ৭৫৩ জন, অক্টোবরে দুই হাজার ৩৭৯ জন, নভেম্বরে তিন হাজার ৯৫১ জন ও ডিসেম্বরে পাঁচ হাজার ২০৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়।

এরপর ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সংক্রমণ কমে শনাক্ত হয় দুই হাজার ৬২৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে এক হাজার ৯২৩ জন। এরপর আবারও করোনার আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। মার্চে চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল পাঁচ হাজার ১১০ জন, এপ্রিলে আক্রান্ত হয় ৯ হাজার ৯০৯, মে মাসে তিন হাজার ২৮০, জুনে পাঁচ হাজার ২৫৯ জন। সবশেষ জুলাইয়ের ২৯ দিনে ২১ হাজার ৪৮০ জনের দেহে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে।

চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৯ হাজার ৩৪১। এদের মধ্যে নগরীর ৭২ হাজার ২২৮ ও উপজেলার ২৭ হাজার ১১৩ জন। চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছে ১ হাজার ২২৭ জন। এরমধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর ৬৮৮ জন আর উপজেলার ৫৩৯ জন।

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলার সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসপাতালগুলোতে ৪০ শতাংশ রোগী আছে সাধারণ শয্যার, ৬০ শতাংশের মতো আসন খালি আছে। তবে আইসিইউগুলোতে এখনও রোগীর চাপ আছে। আইসিইউগুলো এখনও রোগীতে পূর্ণ থাকে । 

জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে জানিয়ে সিভিল সার্জন আরও বলেন, সেপ্টেম্বরে কী পরিস্থিতি থাকবে তা স্বাস্থ্যবিধি মানার উপর নির্ভর করবে। যা রোগী কমেছে তা স্বস্তির কথা না। করোনা আক্রান্তের হার ৫ শতাংশের নিচে এলে কিছুটা রিল্যাক্স হওয়া যাবে। যারা এখন আক্রান্ত হচ্ছেন তারা খারাপের দিকে চলে যাচ্ছেন এখনও। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমাতে হলে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। বাসায় কেউ আক্রান্ত হলে আইসোলেশনে চলে যেতে হবে। সাথে সাথে করোনা টেস্ট করাতে হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের প্রধান উদ্যোক্তা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণের হার কমেছে গেলো দুই সপ্তাহ ধরে। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আরও কমে যাবে। কারণ, মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হচ্ছে। এছাড়া অনেক মানুষ কিন্তু ইতোমধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে গেছেন। 

ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, যারা এখন মারা যাচ্ছেন তারা আক্রান্ত হচ্ছেন এখন থেকে ১৫-২০ দিন থেকে মাস খানেক আগে। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যেহেতু কমছে দেখা যাবে ১৫ দিন পরে মৃত্যুহারও কমে গেছে।  

তিনি বলেন, একটা ভাইরাস যখন দীর্ঘদিন কার্যক্ষম থাকে, দেখা গেছে একসময় এটি ইনএকটিভ হয়ে যায়। করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনও অনেকদিন কার্যকর ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে তার সক্ষমতা হারাচ্ছে। যে কারণে সংক্রমণের হার নিম্নমুখী। যদি করোনাভাইরাসের নতুন কোনো মিউটেশন না হয় তাহলে আক্রান্তের হার আরও নিচের দিকে নামবে।  

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর তুলনায় গ্রামে করোনায় মৃত্যুহার বেশির কারণ হচ্ছে গ্রামের মানুষ যখন তাদের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে তখন চট্টগ্রাম নগরীর হাসপাতালের দিকে আসে। তখন চিকিৎসকদের আর কিছু করার থাকে না। করোনাকে অবহেলা করে চিকিৎসা গ্রহণে সময় নেয়। সেই সময়ে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। 

বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, আশা করছি সেপ্টেম্বরে করোনা সংক্রমণ আরও কমে যাবে। মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার যে প্রবণতা কম, তা বাড়াতে মানুষকে আরও সচেতন করতে হবে। 

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ফোকাল পারসন ও মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রব ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা ইউনিটের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা অনেক কমেছে। তবে আইসিইউতে ১৮টি বেডের ১৮টিতেই রোগী আছে। 

তিনি আরও বলেন, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমছে। আগামী তিন মাস করোনা নিম্নমুখীই থাকবে বলে আশা করছি। ভাইরাস  ন্যাচারালি বাড়তে থাকলে বাড়তেই থাকে। আর কমতে থাকলে কমার দিকেই থাকে। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। এখন যেহেতু রোগীর শনাক্তের হার কমছে, এটা কমে যাবে। যদি মানুষ স্বাস্থ্যসচেতন না হয় তবে আবারও করোনা আক্রান্তরে সংখ্যা বাড়তেও পারে। 

কেএম/এইচকে