র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) দেশব্যাপী ভেজাল, মানহীন ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্য পণ্য উৎপাদন, মজুদ ও বিক্রয়ের অভিযােগে দুই শতাধিক অসাধু ব্যবসায়ীকে প্রায় কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারাদণ্ড হয়েছে।

মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে র‍্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক এএসপি আ ন ম ইমরান খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আ ন ম ইমরান খান বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানান ভেজাল ও মানহীন খাদ্য পণ্য উৎপাদন, মজুদ ও বিক্রয় করছে। খাদ্য পণ্যের স্বাদ বৃদ্ধি, পচনরােধ ও আকর্ষণীয় করার জন্য মেশানাে হচ্ছে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী শিশু খাদ্যেও মেশাচ্ছে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মেয়াদোত্তীর্ণ অথবা মেয়াদবিহীন খাদ্য পণ্য বিক্রয় করছে। এছাড়াও, অনেক হােটেল-রেস্টুরেন্টে নােংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি ও পরিবেশন করা হচ্ছে। খাদ্য উৎপাদনকারী অনেক প্রতিষ্ঠান বা রেস্টুরেন্টের কোনো ধরনের ফুড প্রসেসিং লাইসেন্স নেই। অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফার লােভে এসব ভেজাল, মানহীন ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্য বিক্রয় করছে।

তিনি বলেন, এসব ভেজার খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে সাধারণ জনগণ নানারকম রােগে আক্রান্ত হচ্ছে। খাদ্যে বিষক্রিয়ার জন্য অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। আবার দীর্ঘ সময় ধরে বিষাক্ত রাসায়নিক মিশ্রিত খাদ্য গ্রহণের জন্য অনেকেই দীর্ঘস্থায়ী রােগে আক্রান্ত যা তাদেরকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অসাধু মুনাফালােভী এসব ব্যবসায়ীদের এ ধরনের কার্যক্রমের জন্য দেশের জনগণ স্বাস্থ্যগতভাবে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কার্যক্রম নিয়ে গণমাধ্যমেও রয়েছে বিভিন্ন প্রতিবেদন। অনেক ভুক্তভােগী বিভিন্ন সময়ে র‍্যাবের নিকট অভিযােগ দায়ের করেছেন।

পাশাপাশি র‍্যাবের অনলাইন মিডিয়া সেল ও ফেসবুক পেজে অনেকেই এই সংক্রান্ত নেতিবাচক মন্তব্যসহ অভিযােগ করেছেন। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও সাধারণ মানুষের উদ্বেগের প্রেক্ষিতে র‍্যাব দেশব্যাপী অসাধু মুনাফালােভী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে গােয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এসব অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার র‍্যাব দেশব্যাপী একযােগে ভেজাল, মানহীন ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্য উৎপাদন, মজুদ ও বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত অসাধু মুনাফালােভী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারি দফতর বা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, অন্যান্য সংস্থার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ভেজাল ও মানহীন খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, মজুদকারী ও বিক্রেতাসহ এসব কার্যক্রমে জড়িত অসাধু মুনাফালােভী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী অভিযান পরিচালনা করা হয়।

এখন পর্যন্ত দেশব্যাপী পরিচালিত ৬৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালতে ২০৫ জন অসাধু ব্যবসায়ীকে ৯৭ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। এছাড়াও ছয় অসাধু ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একজনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়। দেশব্যাপী পরিচালিত অভিযানে ধ্বংস করা হয় বিপুল পরিমাণ ভেজাল, মানহীন ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যপণ্য ও খাদ্যপণ্যে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্যাদি।

এমএসি/ওএফ