জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১২-১৩ সেশনের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী মিফতাহুল জান্নাত। এক সময়ে অন্য আরও অনেকের মতো স্বপ্ন দেখেছেন সরকারি চাকরির। তবে করোনার ভিন্ন এক বাস্তবতা তাকে চাকরির পথ থেকে টেনে এনেছে উদ্যোক্তা হওয়ার পথে। 

জান্নাতের এই উদ্যোক্তা হওয়ার পথে মূল অনুপ্রেরণা রয়েছে তার এক বন্ধুর। সেই বন্ধুর নাম আরিফুজ্জামান আরিফ। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করা আরিফও জান্নাতের এই ব্যবসায় অংশীদার।  

জান্নাত ও আরিফ বেশ কিছু পণ্য নিয়ে কাজ করলেও মূলত তারা কাজ করছেন নকশিকাঁথা, নকশি বিছানার চাদর ও জামদানী পণ্য নিয়ে। কাঁথা তৈরির কাঁচামাল তারা নিজেরা সরবরাহ করেন গ্রামের নারীদের। কাঁথাভেদে তাদের দেওয়া হয় ২০০০-৪০০০ টাকা মজুরি। এতে গ্রামের অনেক অস্বচ্ছল পরিবারের মুখেও হাসি ফুটেছে।

মিফতাহুল জান্নাত যশোরের চৌগাছা শাহাদাৎ পাইলট থেকে মাধ্যমিক, যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকে পড়াশোনা করেছেন। তার সফল উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প জানতে তার সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা পোস্টের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক মাহমুদ তানজীদ।

ঢাকা পোস্ট : কেন উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন?
জান্নাত : গতবছরে করোনা মহামারির শুরুতে যখন বুঝলাম আপাতত সরকারি চাকরির কোনো পরীক্ষা হবে না, তখনই আমি এবং আমার ছোটবেলার বন্ধু আরিফ মিলে হাত খরচের জন্য সিদ্ধান্ত নিলাম উদ্যোক্তা হবো। বেকারত্বকে কাজে লাগাতেই মূলত উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তা। সেই ছোট্ট ইচ্ছাটা আজ আমাকে বাংলাদেশের সেরা একজন বিজনেসম্যান হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। কারুকর্ণা নামে বাংলাদেশে একটা ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন দেখি এখন।

ঢাকা পোস্ট : নারী উদ্যোক্তাদের সম্পর্কে আপনার পরামর্শ কী?
জান্নাত : নারীদের জন্যে উদ্যোক্তা হওয়াটা খুব চ্যালেঞ্জিং। আর সেই নারী যদি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা হয়, তাহলে বিষয়টা আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং। নিজের ঘর থেকে শুরু করে পাড়া-প্রতিবেশি, আত্মীয়-স্বজন সবার সমালোচনার মুখে পড়তে হবে। তবে যদি আসলেই জীবনে সফল হওয়ার ইচ্ছা থাকে তাহলে এসব কথায় কান দেওয়া যাবে না। বধির হয়ে নিজের কাজের প্রতি ডেডিকেশন দিতে হবে। একটানা ১০ দিন কোনো বিক্রি হয়নি বলে হতাশ হওয়া যাবে না। ধৈর্য্য ধরে লেগে থাকতে হবে।

ঢাকা পোস্ট : উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে কে সাহস জুগিয়েছিল?
জান্নাত : আমার উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে যে মানুষটার অবদান সবচেয়ে বড় সে আমার ছোটবেলার বন্ধু আরিফুজ্জামান আরিফ। সে আমার বিজনেস পার্টনার। সে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করেছে। পাশাপাশি আমার সাথে বিজনেস করছে। আমি খুব অল্পতেই হতাশ হয়ে যাওয়া মানুষ। কিন্তু আরিফ সব সময় পাশে থেকে আমাকে সাহস জুগিয়েছে। একজন মানুষের সফল হওয়ার জন্যে এরকম একজন বন্ধুর খুব প্রয়োজন। আমাদের দুজনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলেই আমাদের আজকের এই অবস্থান। 

ঢাকা পোস্ট : আপনার ব্যবসার মূলধন কত ছিল এবং বর্তমানে মাসে আয় কত?
জান্নাত : আরিফ আর আমি তিন হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। আর বর্তমানে মাসিক আয় পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। তবে যখন নিয়মিত সময় দিয়ে কাজ করি তখন মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা লাভ থাকে। যদিও পুরোটাই আবার ইনভেস্ট করা হয়ে যায় নতুন পণ্য স্টক করতে। এক বছরে আমরা প্রায় ৬ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছি। 

ঢাকা পোস্ট : কিভাবে আপনি ব্যবসা পরিচালনা করছেন?
জান্নাত : আমার বিজনেসের একমাত্র প্লাটফর্ম হলো ফেইসবুক। এফ কমার্সের মাধ্যমেই আমি বিজনেস পরিচালনা করি। ফেইসবুকে কারুকর্ণা নামে আমার পার্সোনাল গ্রুপ ও পেজ আছে। 

ঢাকা পোস্ট: আপনাকে দৈনিক কত ঘণ্টা সময় দিতে হয়?
জান্নাত : প্রতিদিন চাকরির পড়ার ফাঁকে ফাঁকে আমি ফেইসবুকে মার্কেটিং করি। তবে অনলাইন বিজনেসে ২৪ ঘণ্টাই অনলাইনে থাকা প্রয়োজন।

ঢাকা পোস্ট : আপনারা কী ধরনের পণ্য নিয়ে ব্যবসা করছেন?
জান্নাত : যশোরের ঐতিহ্যবাহী নকশিকাঁথা, বেবি নকশিকাঁথা, নকশি বিছানার চাদর, জামদানী পণ্য নিয়ে কাজ করি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ইন্ডিয়াতে আমরা নকশিকাঁথা পাঠিয়েছি এবং তারা সবাই এখন আমাদের নিয়মিত ক্রেতা। নকশিকাঁথা ছাড়াও আমরা কিছু মৌসুমী পণ্য নিয়ে কাজ করি। যেমন ধরুন সুন্দরবনের মধু, যশোরের খেজুর গুড়, কুমড়া বড়ি।  এছাড়া চটের আসন নিয়ে কাজ করি, যাকে পাটপণ্য বলতে পারেন। আমরা বাঙালির সব ইউনিক আইটেম নিয়ে বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ধরে রাখার চেষ্টা করছি।

এমটি/এনএফ