ফাইল ছবি

দীর্ঘদিন ধরে আবেদন করেও পাসপোর্ট হাতে না পেয়ে অনেকেই হতাশ হচ্ছেন। কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর বরাবরই বলছে, আবেদনপত্রের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদের নামসহ অন্যান্য তথ্য না মিললে পাসপোর্ট প্রক্রিয়া হয় না। তাই পাসপোর্ট ডেলিভারি তরান্বিত করতে এবার আবেদন প্রক্রিয়ায় আরেক পরিবর্তন আনলো অধিদপ্তর।

এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর জানিয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদের সঙ্গে যদি আবেদনকারীর নামসহ অন্যান্য তথ্য না মিলে সেক্ষেত্রে ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র গ্রহণ করা হবে না। ইতোমধ্যেই বিজ্ঞপ্তিটি বিভিন্ন পত্রিকায় ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বিভিন্ন স্থানে টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এনআইডি বা জন্মনিবন্ধন সনদের সঙ্গে ই-পাসপোর্ট আবেদনকারীর নামের বানানসহ সব তথ্য অভিন্ন থাকতে হবে। তথ্যে মিলল না থাকলে আবেদন গ্রহণ করা হবে না। সেক্ষেত্রে তথ্য ভিন্ন ভিন্ন হলে সংশোধন করে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হবে।

অধিদপ্তরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে জানান, পাসপোর্ট করতে হলে এনআইডি জমা দিতে হয়। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সঙ্গে এনআইডির সার্ভার সংযুক্ত। যদি আবেদনকারীর নাম, বাবা-মায়ের নাম, স্থায়ী ঠিকানা জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে অমিল থাকে তাহলে ওই পাসপোর্ট আর ইস্যু হয় না। আগে এ ধরনের সমস্যা হলে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে উপযুক্ত সার্টিফিকেট দেখিয়ে নাম সংশোধন করানো যেতো। তবে বর্তমানে এ সমস্যাটি ই-পাসপোর্ট আবেদনের আগেই সমাধান করে আসতে হবে।

যেভাবে ই-পাসপোর্টের আবেদন করতে হবে

ই-পাসপোর্টের আবেদন করতে হলে গ্রাহককে www.epassport.gov.bd ওয়েবসাইটে লগ ইন করে ডিরেক্টলি টু অনলাইন অ্যাপ্লিকেশনে (Directly to online application) অপশনে ক্লিক করতে হবে।

প্রথম ধাপে বর্তমান ঠিকানার জেলা শহরের নাম ও থানার নাম নির্বাচন করতে হবে। পরের ধাপে ব্যক্তিগত তথ্য সম্বলিত ই-পাসপোর্টের মূল ফরমটি পূরণ করে সাবমিট করতে হবে।

তৃতীয় ধাপে মেয়াদ ও পাসপোর্টের পৃষ্ঠা সংখ্যা অনুযায়ী ফি জমা দিতে হবে। তবে বর্তমানে ই-পাসপোর্টের অনলাইন পেমেন্ট বন্ধ রয়েছে। আবেদনপত্র জমা দিয়ে অ্যাপোয়েনমেন্ট ডেটের আগে অফলাইনে অর্থাৎ সরাসরি নির্ধারিত ব্যাংকে গিয়ে ই-পাসপোর্টের ফি জমা দিতে হবে। ফি জমা দেওয়ার নির্ধারিত ব্যাংকগুলো হলো- ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ও ঢাকা ব্যাংক।

ই-পাসপোর্ট ফি

৫ বছর মেয়াদের ৪৮ পাতার ই-পাসপোর্ট ‘রেগুলার ডেলিভারি’ ক্যাটাগরিতে ১৫ কার্যদিবসের পেতে ৪০২৫ টাকা, ‘এক্সপ্রেস ডেলিভারি’তে সাত কার্যদিবসে পেতে ৬৩২৫ টাকা এবং ‘সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি’তে ২ কার্যদিবসের মধ্যে পেতে ৮৬২৫ টাকা জমা দিতে হবে। তবে আবেদনকারীকে সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারির আবেদন করতে হলে আবেদনের আগেই নিজ দায়িত্বে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট নিতে হবে।

১০ বছর মেয়াদের ৪৮ পাতার ই-পাসপোর্ট ‘রেগুলার ডেলিভারি’ ক্যাটাগরিতে ১৫ কার্যদিবসের পেতে ৫৭৫০ টাকা, ‘এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে সাত কার্যদিবসে পেতে ৮০৫০ টাকা এবং ‘সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি’তে ২ কার্যদিবসের মধ্যে পেতে ১০ হাজার ৩৫০ টাকা জমা দিতে হবে।

৫ বছর মেয়াদের ৬৪ পাতার ই-পাসপোর্ট ‘রেগুলার ডেলিভারি’ ক্যাটাগরিতে ১৫ কার্যদিবসের পেতে ৬৩২৫ টাকা, ‘এক্সপ্রেস ডেলিভারি’তে সাত কার্যদিবসে পেতে ৮৬২৫ টাকা এবং ‘সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি’তে ২ কার্যদিবসের মধ্যে পেতে ১২ হাজার ৭৫ টাকা জমা দিতে হবে।

১০ বছর মেয়াদের ৬৪ পাতার ই-পাসপোর্ট ‘রেগুলার ডেলিভারি’ ক্যাটাগরিতে ১৫ কার্যদিবসের পেতে ৮০৫০ টাকা, ‘এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে সাত কার্যদিবসে পেতে ১০৩৫০ টাকা এবং ‘সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে ২ কার্যদিবসের মধ্যে পেতে ১৩ হাজার ৮০০ টাকা জমা দিতে হবে। 

এছাড়া ৪৮ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদের নতুন অথবা রি-ইস্যু এমআরপি ৭ দিনে পেতে ৬৯০০ টাকা ও ২১ দিনে পেতে ৩৪৫০ টাকা দিতে হবে। এমআরপি ও ই-পাসপোর্ট উভয় ফি'র সঙ্গে ভ্যাট যুক্ত রয়েছে। অন্যদিকে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীরা রেগুলার ডেলিভারির জন্য আবেদন করলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে তারা এক্সপ্রেস ডেলিভারির সুবিধা পাবেন।

ই-পাসপোর্ট করতে যা যা জমা দিতে হবে

একজন প্রাপ্ত বয়স্কের ই-পাসপোর্ট করতে ফরম পূরণ করে সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা স্মার্ট কার্ডের ফটোকপি জমা দিতে হবে। পাশাপাশি পরিচয়পত্রের মুল কপিও অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দেখাতে হবে।

১৮-এর কমবয়সীদের জন্য জন্ম-নিবন্ধন সার্টিফিকেট, বাবা-মায়ের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি জমা দিতে হবে।

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য অনাপত্তিপত্র-এনওসি এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জন্য অবসরের প্রমাণপত্র হিসেবে পেনশনের দলিল দেখাতে হবে।

এআর/এমএইচএস