রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে মূলত বিলুপ্ত প্রাণীদের সংরক্ষণ, গবেষণা ও বিনোদনের জন্য । তারপরও পৃথিবীর অন্যান্য চিড়িয়াখানার আদলে এখান থেকে কিছু অর্থ আয়ের কথা ভাবছে কর্তৃপক্ষ। উদ্দেশ্য- মানুষ যেন প্রাণভরে বিনোদন নিতে পারে আবার সরকারও যেন কিছুটা আয় করতে পারে।

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, এ বছর জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ৫১টি হরিণ বিক্রি করে চিড়িয়াখানা আয় করেছে ৩৬ লাখ টাকা। গেল মৌসুমে ৬ লাখ ৬৩ হাজার টাকার ফল বিক্রিসহ কিছু গাছও বিক্রি করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া নিয়মিত পশুর খাবারের উচ্ছিষ্ট বা অতিরিক্ত অংশও বিক্রি করে কর্তৃপক্ষ। এসব বিক্রির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে চিড়িখানা কর্তৃপক্ষ। 

অন্যদিকে বছরে দর্শনার্থীদের কাছে টিকিট বিক্রি থেকে বড় অংকের অর্থ আয় করে প্রতিষ্ঠানটি। এ বছর টিকিট বিক্রির নিলাম থেকে ১২ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। এখান থেকে ট্যাক্স ভ্যাট বাদ দিয়ে সরকারের ঘরে প্রায় ১০ কোটি টাকা জমা পড়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, বেতন-ভাতা বাদ দিয়ে সরকার এখানে যে পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করছে তার চেয়ে তাদের ইনকাম বেশি। 

এত কিছুর পরও নতুন করে আরও আয়ের কথা ভাবছে জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এই ভাবনার মধ্যে আছে চিড়িয়াখানার ভেতরে ইভেন্ট বাড়ানো। যেমন- হাতির ফুটবল খেলার আয়োজন করা,  প্রাণীদের সঙ্গে সেলফি তোলা ও খাবার খাওয়ানোর বিশেষ আয়োজন করা, সেল্ফি স্ট্যান্ড তৈরি করা প্রভৃতি। দর্শনার্থীরা ভেতরে ঢোকার পর নতুন করে টিকিট কেটে এসব ইভেন্ট উপভোগ করবেন। এতে দর্শনার্থীদের শখও মিটবে, সরকারেরও রেভিনিউ আসবে। 

প্রতিটি ইভেন্টের জন্য আলাদা করে টিকিট কাটার ব্যবস্থা আমাদের দেশের মতো জায়গায় ঠিক হবে কি না- জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর প্রাণী চিকিৎসক ডা. আব্দুল লতীফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘পৃথিবীর অন্যান্য চিড়িয়াখানায় এসব ব্যবস্থা আছে। আমাদের দেশের মানুষের ইনকাম যেহেতু কম, তাই এই বিষয়টা মানুষের জন্য যেন বার্ডেন না হয় সে বিষয়ে চিন্তা করেই টিকিটের দাম নির্ধারণ করা হবে। সরকারকে এখানে যেন ভর্তুকি দিতে না হয়, সেজন্য কিছু রেভিনিউ অর্জন করাই হচ্ছে এটার মূল উদ্দেশ্য। এটা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতর সবাইকে জানিয়েই করা হবে। এটা আমার ব্যক্তিগত ইচ্ছা নয়।’ 

চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে প্রস্তুত হয়েছে চিড়িয়াখানায় থাকা শিশু এলাকা। সেখানে যুক্ত হয়েছে ইলেকট্রিক ট্রেন এবং মেরি গো রাউন্ড।এগুলোর টিকিটের দাম কেমন হবে সেটা সুপারিশ করে পাঠানো হয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে অনুমোদন পেলে এটি ৭ দিনের মধ্যে চালু করা যাবে। একসঙ্গে কমপক্ষে ৩০ জন শিশু ট্রেনে উঠতে পারবে এবং ১৫-২০ জন শিশু মেরি গো রাউন্ডে। এছাড়া শিশুপার্কে বাহারি ধরনের জীবন্ত প্রজাপতি দেখার ব্যবস্থার করা হচ্ছে। যা বাস্তবায়ন করতে মাত্র তিন মাস সময় লাগবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি মিললেই এটির কাজ শুরু হবে। 

এদিকে ২০৪১ সালে উন্নত বিশ্বে পদার্পণ করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। জাতীয় চিড়িয়াখানা যেন এক্ষেত্রে পিছিয়ে না পড়ে, সেজন্য চিড়িয়াখানাকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে এক মহাপরিকল্পনা। তা বাস্তবায়ন হলে চিড়িয়াখানা হবে আধুনিক এবং আরও সৌন্দর্যমণ্ডিত। তবে এ মহাপরিকল্পনা তৈরির কাজ এ বছর জুন মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মহামারি করোনার কারণে পিছিয়ে গেছে সেই কাজ। শুধু মহাপরিকল্পনা তৈরি করতেই আরও এক বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ঠিক করা হয়েছে।

এমএইচএন/এসএম/জেএস/এইচকে