ডিএমপি’র আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন

রাজধানীতে সংঘবদ্ধ ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের কবলে হয়রানির ঘটনা থামছে না। এসব অপরাধীদের হাতে প্রাণও যাচ্ছে অনেকের। গত ২৮ ডিসেম্বর সকালে প্রাণ হারান ব্যবসায়ী আপন মিয়া। এ ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ। প্রকাশ্যে এসেছে ঢাকার অপরাধ জগতের এক ভয়াবহ চিত্র।

মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে অভিযান পরিচালনা করে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানা এলাকা থেকে ওই ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। 

আঘাতে ছটফট করতে করতে ঘটনাস্থলেই মারা যান ব্যবসায়ী আপন মিয়া। এ সময় আশপাশ দিয়ে অনেক গাড়ি চলাচল করছিল। কিন্তু কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি।

গ্রেফতাররা হলেন- সজল, মুসা, বাচ্চু, সজীব, মুন্না ও সিদ্দিক। ডিবি পুলিশ বলছে, তারা সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সদস্য। গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত পিকআপ গাড়ি, দেশীয় চাকু, লুণ্ঠিত ৭ হাজার টাকা ও একটি মোবাইলফোন উদ্ধার করা হয়।

রূপগঞ্জ থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। 

আজ বুধবার দুপুরে ডিএমপি’র মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, গত ২৮ ডিসেম্বর সকালে আপন মিয়া ও তার সঙ্গী নজরুল ইসলাম প্রতিদিনের মতো রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকার বাসা থেকে বের হন। বিমানবন্দর থানাধীন কাওলা ফুটওভার ব্রিজের পূর্ব পাশে গাড়ির জন্য তারা অপেক্ষা করতে থাকেন। এ সময় একটি পিকআপ ভ্যান আসে। আপন মিয়ারা কাওরান বাজারে যাওয়ার জন্য পিকআপে ওঠেন। ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পিকআপের পিছনে যাত্রীবেশে বসে থাকা ডাকাতরা ছুরির মুখে আপন মিয়াদের টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। ছুরিকাঘাতের পর ধাক্কা মেরে চলন্ত পিকআপ থেকে আপন মিয়াদের ফেলে দেওয়া হয়। 

• রাত ১১টার পর ভাড়া করা পিকআপ নিয়ে ডাকাতি করতে বের হন 
• সপ্তাহে একাধিক দিন ডাকাতি, দিনে একাধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটান 
• কমিশনার (ডিবি) হাফিজ আক্তার বলেন, নিয়মিত টহল বাড়ানো হয়েছে

আঘাতে ছটফট করতে করতে ঘটনাস্থলেই মারা যান সবজি ব্যবসায়ী আপন মিয়া। এ সময় আশপাশ দিয়ে অনেক গাড়ি চলাচল করলেও কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি।

এ ঘটনায় গত ৬ জানুয়ারি নিহতের পরিবার বিমানবন্দর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে বেড়িয়ে আসে ঘটনার ভয়াবহতা। 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানান, তারা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তারা সাধারণত রাত ১১টার পর  একটি ভাড়া করা পিকআপ নিয়ে ডাকাতি করতে বের হন। সাধারণত তারা আব্দুল্লাহপুর থেকে কাওরান বাজার, রামপুরা থেকে যাত্রাবাড়ী, যাত্রাবাড়ী থেকে ভুলতা গাউছিয়া এলাকায় গিকআপযোগে ডাকাতি করেন।

ওই পিকআপের সামনের সিটে ৩ জন বসেন এবং অন্যরা যাত্রী বেশে পিকআপের পিছনে থাকেন। ঢাকা মহানগরীর যেসব এলাকায় মাছ, ফলমূল ও সবজির পাইকারি আড়ৎ বসে সেখানে যেসব ব্যবসায়ীরা মালামাল কিনতে যান তাদেরকে টার্গেট করেন ওই পিকআপের ডাকাতরা। 

তারা আরও জানান, গত ২৮ ডিসেম্বর ভিকটিমদের কাওরান বাজার নেওয়ার উদ্দেশ্যে সুকৌশলে পিকআপে তোলেন তারা। এরপর মুসা ও রফিক ভিকটিমদের বুকে চাকু ধরেন। পিকআপের সামনে বসা সজল পিছনে চলে আসেন এবং ভিকটিমদের কাছে থাকা টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে তাদের ধাক্কা মেরে পিকআপ থেকে ফেলে দেন। তারা সপ্তাহে একাধিক দিন ডাকাতি করতে বের হন এবং দিনে একাধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটান। 

এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনার (ডিবি) হাফিজ আক্তার বলেন, রাতে অন্যান্য যানবাহন কম চলাচল করে। এই সুযোগে চুরি-ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। সেজন্য নিয়মিত টহল বাড়ানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অধিকাংশ সময়েই স্বল্প আয়ের মানুষ থানায় রিপোর্ট করেন না। আমাদের অনুরোধ, যেকোনো সময় এই ধরনের ঘটনা ঘটলে পুলিশকে জানানো হোক। পুলিশ জনগণের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বদ্ধপরিকর।

জেইউ/এইচকে