স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম

বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষায় বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য সাতটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সক্ষমতা ও পরীক্ষামূল্য বিবেচনায় নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের নাম প্রস্তাব করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এর ভিত্তিতে সাতটি প্রতিষ্ঠানকেই অনুমোদন দেয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

সাতটির মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অতীতে করোনার ভুয়া সনদ দেওয়াসহ টাকার বিনিময়ে নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই পরীক্ষার ফল দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয় বিভিন্ন মহলে।

অনুমোদনের বিষয়টি নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। রোববার সন্ধ্যায় দেশের করোনা পরিস্থিতি ও সার্বিক টিকা কর্মসূচি নিয়ে এক ভিডিও বার্তায় এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন, বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর টেস্টের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে আমাদের সভা হয়েছিল। সভায় আরটি-পিসিআর টেস্টের জন্য আমাদের কারিগরি সহায়তার জন্য বলা হয়েছিল। যারা আবেদন করবে, তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কাগজপত্র, সক্ষমতা ইত্যাদি যাচাই-বাছাই করে আমরা যেন কয়েকটি ল্যাবরেটরিকে অনুমোদন দিই। এরপর কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের সবকিছু যাচাই-বাছাই করে আমরা কয়েকটিকে অনুমোদন দিই।

তিনি বলেন, অনুমোদনের ক্ষেত্রে আমাদের সামনে দুটো বড় প্যারামিটার ছিল। একটি হচ্ছে, কে দ্রুততম সময়ে করতে পারবে, অন্যটি হলো, কে কম দামে করতে পারবে। যেহেতু প্রবাসী শ্রমিক ভাইয়েরা যাচ্ছেন, তারা একবার একটি রুটিন আরটি-পিসিআর করবেন, তারপর তাদের আরেকটি আরটি-পিসিআর করতে হবে। কাজেই তাদের ওপর যেন অতিরিক্ত অর্থের জন্য চাপ না পড়ে, সে নির্দেশনা আমাদের দেওয়া হয়েছিল। আমরা তারই ভিত্তিতে যাবতীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দিয়েছিলাম।

স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন, বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর নিয়ে আমাদের বিভিন্ন সময়ে দোষারোপ করা হয়। আমি বলতে পারি, এ বিষয়ে আমাদের ভূমিকা ততটুকুই, যতটুকু আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর বেশি আমরা কাজ করিনি বা এর কম কাজও আমরা করিনি। আমাদের যতটুকু করতে বলা হয়েছে, তা মাথায় রেখে আমরা তাদের অনুমতি দিয়েছিলাম।

খুরশীদ আলম বলেন, আমরা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষের কাছে সাতটি প্রতিষ্ঠানের তালিকা পাঠিয়েছি। আমাদের বলা হয়েছে টেকনিক্যাল সাপোর্ট ও একটি কমিটি করে দেওয়ার জন্য। সেই কমিটি পরবর্তী সময়ে এখানে কাজ করবে এবং অনুমোদনপ্রাপ্ত ল্যাবগুলোর কার্যক্রম মনিটরিং করবে। একইসঙ্গে তাদের কাজের মান পর্যালোচনা করবে। আমরা তাদের টেস্টের ভ্যালিডিটি দেখব।

তিনি বলেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ চাইলে আমাদের নির্বাচিতগুলো থেকেও কাজ দিতে পারে, বা অপেক্ষমাণ যারা ছিল, তাদের থেকেও কাজ দিতে পারে। আমরা সব তালিকা তাদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। এ বিষয়ে আমাদের অধিদফতরের পক্ষ থেকে বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নতুন করে কিছু করার নেই।

মহাপরিচালক আরও বলেন, যারা এখন কাজ করবে, তাদের বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রণালয় আমাদের যে নির্দেশনা দেবে, আমরা সে অনুযায়ী কাজ করে যাব।

গত বুধবার যে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিত করে অফিস আদেশ জারি করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- স্টেমজ হেলথ কেয়ার (বিডি) লিমিটেড, সিএসবিএফ হেলথ সেন্টার, এএমজেড হাসপাতাল লিমিটেড, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জয়নুল হক সিকদার ওমেন্স মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল, গুলশান ক্লিনিক লিমিটেড ও ডিএমএফআর মলিকুলার ল্যাব অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক। এগুলোর মধ্যে বিদেশগামীদের ভুয়া সনদ দেওয়ায় অভিযোগে কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল সদ্য অনুমোদন পাওয়া সিএসবিএফ হেলথ সেন্টার ও স্টেমজ হেলথ কেয়ার (বিডি) লিমিটেড।

ভুয়া সনদ দেওয়ায় গত ১০ জুন সিএসবিএফ হেলথ সেন্টার, স্টেমজ হেলথ কেয়ারের বিদেশগামীদের পরীক্ষা ও নমুনা সংগ্রহের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করেছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষার সরকার নির্ধারিত ফি আড়াই হাজার টাকা। সিএসবিএফ ও স্টেমজের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তারা দালালের মাধ্যমে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা নিয়ে নমুনা পরীক্ষা না করেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নেগেটিভ রিপোর্ট দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে যাওয়া কর্মীদের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট দিয়েছিল।  

টিআই/আরএইচ