বখাটে, ছিনতাইকারী ও মাদকসেবীদের দখলে আছে রাজধানীর অনেক ফুটওভার ব্রিজ। এসব ব্রিজে প্রকাশ্যে বসে গাঁজা ও ড্যান্ডির আসর। পথচারীদের যাতায়াত কম থাকলে শুরু হয় ছিনতাই। বিশেষ করে সন্ধ্যা নামলে বেড়ে যায় অপরাধীদের দৌরাত্ম্য। 

দিনভর মাদক সেবনের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয় রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের মেট্রো শপিং মল সংলগ্ন ফুটওভার ব্রিজটি। সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ফুটওভার ব্রিজের পূর্বপাশে যথারীতি ছয় মাদকসেবীর একটি দলের গাঁজার আসর বসেছে। কাগজের পুরিয়া থেকে বের করে প্রস্তুত করা হচ্ছে গাঁজা। তাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, অফিসমুখী মানুষজন। অনেকটা দেখেও না দেখার ভান করে সবাই দ্রুত পায়ে ফুটওভার ব্রিজ পার হচ্ছেন।

ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদক দেখে গাঁজার আসর ছেড়ে কৌশলে স্থান ত্যাগ করে দুই মাদকসেবী। ফুটওভার ব্রিজ গাঁজা সেবনের জায়গা কি না জানতে চাইলে রফিক নামে এক মাদকসেবী বলে, ‘আমরা রাস্তায় থাকি, তাই রাস্তায় বসেই গাঁজা খাই। আর এখানে আমরা অনেকদিন থেকেই বসি।’

কোথা থেকে আসে এ গাঁজার চালান? প্রশ্নের উত্তরে রিশাদ নামে আরেক মাদকসেবী বলেন, ‘আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আমাদের হাতে আসে গাঁজা ও ড্যান্ডি। মাত্র ৬০ থেকে ১০০  টাকা হলেই মেলে এক পুরিয়া গাঁজা। ড্যান্ডির জন্য খরচ করতে হয় আরেকটু বেশি।’  একপর্যায়ে এ প্রতিবেদকের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে মাদকসেবীরা। 

এই ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী মানুষ ও স্থানীয় দোকানিরা জানান, মাদকসেবীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। কেউ প্রতিবাদও করতে পারেন না। কেউ যদি তাদের এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করেন তাহলে তার ওপর হামলা করে মোবাইল ও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয় মাদকাসক্তরা।

স্থানীয় চা বিক্রেতা মনু মিয়া বলেন, দিনের বেলা বখাটেদের দৌরাত্ম্য কম থাকলেও সন্ধ্যা থেকে সারা রাত চলে রমরমা অবস্থা। ফুটওভার ব্রিজে বসেই গাঁজা ও ড্যান্ডি সেবন এবং ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপকর্ম করে চক্রটি।

ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গার ফুটওভার ব্রিজ মাদকসেবীদের দখলে থাকার বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন অনেক নগরবাসী। 

সৈকত হাসান নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি প্রতিদিনই এ ব্রিজ দিয়ে যাতায়াত করি এবং অধিকাংশ সময়ই দেখি তারা এখানে বসে আছে। হয় গাঁজা সেবন করছে না হয় ড্যান্ডি। দিনে ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে চলাচল করলেও সন্ধ্যার পর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মূল সড়ক দিয়ে রাস্তা পার হই। ভুলেও ফুটওভার ব্রিজে উঠি না।’

এ অবস্থায় সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা কী? জানতে চাই শেরে বাংলানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানে আলম মুন্সির কাছে। তিনি বলেন, এর আগে আমাদের কাছে এমন অভিযোগ আসেনি। এখন যেহেতু আমরা জানতে পেরেছি, দ্রুতই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। 

এ বিষয়ে পুলিশকে জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মাহবুবুর রহমানের। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, শুধুমাত্র এ স্থানেই নয় বরং শুক্রাবাদের আরও কয়েকটি জায়গায় রয়েছে মাদকসেবীদের নিয়মিত আনাগোনা। এসব ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনকে পূর্বেই অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তাদের নীরবতার কারণ আমার জানা নেই।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার কাজ হচ্ছে পুলিশ প্রশাসনকে জানানো। মূল ব্যবস্থা তারা গ্রহণ করবে। আমি তো আর জনবল রাখি না যাদের মাধ্যমে এগুলো নির্মূল করব। 

আরএইচটি/এসকেডি/জেএস