ই-কমার্স ব্যবসা কার্যক্রম নিয়ে বর্তমানে তৈরি হওয়া পরিস্থিতির সমাধানে ছয়টি প্রস্তাব দিয়েছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। 

বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল গণমাধ্যমে এ ছয়টি প্রস্তাব তুলে ধরেন।

প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ডিজিটাল কমার্স সেল কার্যকর ও এর সক্ষমতা বাড়ানো, ডিজিটাল কমার্স পলিসি-২০১৮ অনুযায়ী কমিটি গঠন, ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে এসক্রো সেবা চালু, ডাক বিভাগের মাধ্যমে সংযুক্ত করে ডেলিভারি/লজিস্টিক এগ্রিগেটর প্লাটফর্ম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়/ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মাধ্যমে সেন্ট্রাল ডিজিটাল কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি করা এবং সমস্যা প্রতিকারে আইনের প্রয়োগ।

ডিজিটাল কমার্স সেল কার্যকর ও এর সক্ষমতা বাড়ানো

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কমার্স সেলকে একটিভ করা জরুরি। এতে লোকবল বাড়ানো এবং তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন মানবসম্পদ নিয়োগ করতে হবে। এই সেল প্রয়োজনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করবে। এখানে আলাদা ইউনিট থাকতে পারে ‘আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সি ইউনিট’ নামে।

ডিজিটাল কমার্স পলিসি-২০১৮ অনুযায়ী কমিটি গঠন

ক. রিস্ক ফ্যাক্টর ম্যানেজমেন্ট কমিটি: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রতিযোগিতা কমিশন, ভোক্তা অধিকার, বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্যদের সমন্বয়ে একটি রিস্ক ফ্যাক্টর ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। এই কমিটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ তদারক ও নিয়ন্ত্রণ করবে।

খ. কারিগরি কমিটি: অর্থনৈতিক লেনদেনের উপর নজর রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটি কারিগরি কমিটি তৈরি করবে। কমিটির ক্ষমতা ও কার্যবিবরণী সংক্রান্ত একটি টিওআর তৈরির মাধ্যমে কমিটির কর্মপরিধি ও দায়দায়িত্ব ঠিক করা থাকবে।

গ. উপদেষ্টা কমিটি: ডিজিটাল কমার্স পলিসি-২০১৮ অনুসারে উক্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির কার্যক্রম নিয়মিতকরণ করতে হবে এবং কমিটিতে কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয় করে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণে কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করা যেতে পারে।

ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে এসক্রো সেবা চালু

স্বয়ংক্রিয় এসক্রো ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এই সিস্টেমে বাংলাদেশ ব্যাংক, কার্ড প্রচলক, পেমেন্ট এগ্রিগেটর মার্চেন্ট, ডেলিভারি এজেন্ট ও কাস্টমার সবাইকে তার প্রয়োজন অনুসারে প্রবেশাধিকার ও ড্যাশবোর্ড দেওয়া যেতে পারে। এমনকি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদকে এখানে প্যানেল এর মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ এর সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। 

ডাক বিভাগের মাধ্যমে সংযুক্ত করে ডেলিভারি/লজিস্টিক এগ্রিগেটর প্লাটফর্ম

বর্তমান নিয়মে কুরিয়ার সেবা দিতে হলে ডাক বিভাগের লাইসেন্স নিতে হয়। কিন্তু লাইসেন্স না নিয়ে সেবা দিলে কোনো নজরদারি হয় না। তাই এটি একটি অটোমোটেড পদ্ধতিতে করতে হবে। এই সেবায় মার্চেন্ট, গ্রাহক ও ডেলিভারি এজেন্ট যুক্ত হয়ে পিন নাম্বার বা ওটিপির মাধ্যমে পণ্য ডেলিভারি নিশ্চিত করবে। এই রিপোর্ট এর উপর ভিত্তি করে এসক্রো সেবা মার্চেন্ট এর অর্থ ছাড় দেবে। প্রয়োজনে এটি এসক্রো সেবার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। এটি সব ডেলিভারি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বয় ও সংযুক্ত করে তার তথ্য এসক্রো সিস্টেমকে প্রেরণ করবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়/ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মাধ্যমে সেন্ট্রাল ডিজিটাল কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি করা

ভোক্তা অধিকারে আসা অভিযোগ চিঠি বা ই-মেইল দেওয়া যায়। কিন্তু সেগুলো অ্যানালাইসিস করতে হয় ম্যানুয়েলে। তাই সিস্টেমটাকে আরো আধুনিক, অংশগ্রহণমূলক, স্বয়ংক্রিয় ও বহুমুখী করা প্রয়োজন। যাতে ক্রেতা বিক্রেতা ও অন্যান্য পক্ষ সংযুক্ত থাকবে। এতে ই-ক্যাবসহ সংশ্লিষ্ঠ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও বিভাগকে পর্যবেক্ষক হিসেবে যুক্ত করা যাবে। এ ব্যাপারে কারিগরি সহযোগিতা ই-ক্যাব থেকে দেওয়া যাবে। প্রতিটি সঠিক অভিযোগের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটা চার্জ ধার্য করা দরকার যা থেকে সিস্টেম এর ব্যয় নির্বাহ করা হবে।

সমস্যা প্রতিকারে আইনের প্রয়োগ

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বা বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করার মাধ্যমে অভিযুক্তদের ‍বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা ও দোষী সব্যস্ত হলে আইনের আওতার এনে দেশের প্রচলিত আইনে শাস্তি প্রয়োগ করতে পারে।

ই-কমার্স আইন প্রয়োগ সময়সাপেক্ষ হতে পারে। তবে দোষী প্রমাণিত যারা হবে তাদেরকে প্রচলিত আইনে প্রয়োজনে দ্রুত বিচার আইনে বা বিশেষ নির্দেশনায় দ্রুত বিচারের মাধ্যমে রায় প্রদান করে। তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক ও মার্চেন্টদের পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে। 

একে/জেডএস