বিশ্বের পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। দেশের পর্যটন খাতকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার ক্ষেত্রে এই ট্যুরিজম পার্কগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।

সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় নির্মানাধীন সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সরেজমিনে পরিদর্শনের অংশ হিসেবে সাবরং ট্যুরিজম পার্ক পরিদর্শন করেন তিনি। 

এ সময় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) শেখ ইউসুফ হারুন, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও অর্থ) (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ হাসান আরিফ, সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের ব্যবস্থাপক (উপ-সচিব) মাহবুরুর রহমান, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসান, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদসহ বেজার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বেজা থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

মুখ্য সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পরিকল্পিত শিল্পায়নের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। এর পাশাপাশি সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক উন্নয়ন করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে দেশের দর্শনীয় স্থানগুলো পর্যটকদের জন্য আরও আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা হবে।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে বেশ কিছু বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বেজা সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের মতো ইউটিলিটির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। 

এসব প্রতিষ্ঠানকে অতি দ্রুত নির্মাণকাজ শুরু করার তাগিদ দেন ইউসুফ হারুন। পাশাপাশি এই অঞ্চলের প্রকৃতি ও জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণে রেখে পাঁচ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে বলেও জানান বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান।

বেজা জানায়, সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে গ্রেট আউটডোর অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার লিমিটেড, গ্রিন অরচার্ড হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেড এবং সানসেট বে লিমিটেড নামের তিনটি প্রতিষ্ঠান ৫.৫ একর জমিতে ৩২.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করছে। পাশাপাশি পাঁচ তারকা ও তিন তারকা মানের হোটেলসহ পর্যটনবান্ধব বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। এছাড়াও বিনিয়োগকারীর তালিকায় নেদারল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের দুটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। মোট প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ৩৩৪.৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বেজা আরও জানায়, সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে এরই মধ্যে প্রশাসনিক ভবন, ডাইক নির্মাণ, ব্রিজ নির্মাণ, ছয় ভেন্ট স্লুইস গেট (রেগুলেটর) নির্মাণ এবং বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের জুনে সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের আইকনিক ফটো কর্নার উদ্বোধন করা হয়। এছাড়া এখানে প্রতিরক্ষা বাঁধ, ভূমি উন্নয়ন কাজসহ পানি সরবরাহ লাইন ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ চলমান আছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে দুটি গেট ও অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।

জানা গেছে, ৯৬৪.৯৫ একর আয়তনের এই পার্ক কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নে অবস্থিত। পার্কটি ঢাকা থেকে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার ও কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৮২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মেরিন ড্রাইভের মাধ্যমে ট্যুরিজম পার্কের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। তাছাড়া জাতীয় মহাসড়ক এন-১-এর মাধ্যমে ট্যুরিজম পার্কের সঙ্গে দেশের অন্যান্য এলাকার সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি ৩৯ হাজার পর্যটক উপভোগ করতে পারবে। এতে করে প্রায় ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।

এসআর/ওএফ