দুদক কার্যালয়ে সুকুমার মৃধা এবং তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধা

অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারসহ বিভিন্ন প্রতারণা করে পালিয়ে যাওয়া প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের অর্জিত অবৈধ সম্পদের প্রায় ২২ কোটি টাকার সমপরিমাণ সম্পদের দখলে রয়েছেন সুকুমার মৃধা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধা।

এই সুকুমার মৃধা পি কে হালদারের আয়কর সম্পর্কিত আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন। তার মেয়ে অনিন্দিতা উইন্টেল ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক।

সুকুমার মৃধার দখলে রয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকার সম্পদ এবং তার মেয়ে অনিন্দিতার দখলে প্রায় দেড় কোটি টাকার সম্পদ থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের সচিব মুহা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘পি কে হালদার বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার পর তার অবৈধ সম্পদ দেখাশোনা করতেন সুমুকার মৃধা ও অনিন্দিতা মৃধা। পি কে হালদারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান সুকুমার মৃধার তত্ত্বাবধান করেন।’

তিনি বলেন, ‘পি কে হালদার ভুয়া ঋণ দেখিয়ে অবৈধভাবে অর্জিত প্রায় ১০০ কোটি টাকা তার মা লিলাবতী হালদারের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে রাখেন। পরে লিলাবতী হালদারের ব্যাংক হিসাব থেকে সুকুমার মৃধা, অবন্তীকা বড়াল ও অনিন্দিতা মৃধা পি কে হালদারের কাছে হস্তান্তর ও স্থানান্তর করে মানিলন্ডারিং করেছেন বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা তথ্য পেয়েছেন।’

যদিও সুকুমার মৃধা দাবি করেন, ‘পত্রপত্রিকায় যা লেখালেখি হচ্ছে সেই বিষয়ে পি কে হালদারের কোনো ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই। তিনি কেবল আমার ক্লায়েন্ট।’

বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) সুকুমার মৃধা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধাকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুপুর সোয়া ১টায় অনুসন্ধান কর্মকর্তা কমিশনের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন গ্রেপ্তার করেন। পরবর্তীতে তাদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাইলে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়।

এর আগে, ১৩ জানুয়ারি পি কে হালদারের আরেক সহযোগী অবন্তীকা বড়ালকে গ্রেপ্তার করেছে দুদক। মামলার তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় এর আগে গত ৪ জানুয়ারি পি কে হালদারের আরেক ঘনিষ্ঠ সহযোগী শঙ্খ ব্যাপারীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। 

শঙ্খ ব্যাপারীর নামে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া যায়, যা পি কে হালদারের অর্থায়নে কেনা হয়েছে বলে দুদকের এক কর্মকর্তা জানান।

অভিযোগ রয়েছে পি কে হালদার পিপলস লিজিং ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) দায়িত্ব পালন করে প্রায় তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন।

ক্যাসিনো অভিযানের ধারাবাহিকতায় তার বিরুদ্ধে এরই মধ্যে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে দুদক। ক্যাসিনোবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের পরপরই প্রশান্ত কুমার হালদারের নাম উঠে আসে। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর হাজির হতে নোটিশ দিয়েছিল সংস্থাটি।

৩ অক্টোবর পি কে হালদারের বিদেশযাত্রায়ও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি ঠিকই দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। পরে দেশে আসার কথা বলেও আর আসেননি। এরই মধ্যে ৮ জানুয়ারি দুদকের অনুরোধে গ্রেপ্তার পরোয়ানা দিয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ইন্টারপোল।

এদিকে, পি কে হালদারের প্রতারণায় সহায়তাকারী ২৪ জনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। আর এখন পর্যন্ত তার সহযোগী হিসেবে ৬২ জনকে শনাক্ত করেছে দুদক।

আরএম/এফআর