চলতি বছর প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় রোববার (৩ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সমন্বিত বিশেষ অভিযান শুরু হচ্ছে। আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের ৩৮টি জেলায় এ বিশেষ অভিযান পরিচালিত হবে। 

জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় মৎস্য দফতর, বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী সমন্বিতভাবে এ অভিযান পরিচালনা করবে। 

রোববার (৩ অক্টোবর) সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রওনক মাহমুদের সভাপতিত্বে এ সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। 
 
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার, মো. তৌফিকুল আরিফ ও এস এম ফেরদৌস আলম, যুগ্ম সচিব সুবোধ চন্দ্র ঢালী, মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক কাজী শামস্ আফরোজ ও নৌপুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি শফিকুল ইসলাম সভায় অংশগ্রহণ করেন। 

মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সংশ্লিষ্ট ৩৮ জেলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, মৎস্য অধিদফতরের স্থানীয় কর্মকর্তা, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, র‌্যাব এবং মৎস্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সভায় ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

সভা থেকে জানানো হয়, অভিযান বাস্তবায়নের সময় ২০টি জেলায় নদ-নদী, মোহনা ও সাগরে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। জেলাগুলো হলো- ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বাগেরহাট। 

এছাড়া ১৮টি জেলায় নদ-নদীতে ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। জেলাগুলো হলো- নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, জামালপুর, রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খুলনা, কুষ্টিয়া ও নড়াইল। 

সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রওনক মাহমুদ বলেন, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে, ইলিশ মাছকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। মৎস্য বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতেই ইলিশের সর্বোচ্চ প্রজনন সময় বিবেচনা করে এ বছর ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ইলিশ আহরণ বন্ধ থাকার সময়ে এ বছর ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৯৪৪টি জেলে পরিবারের জন্য ১১ হাজার ১১৮ দশমিক ৮৮ মেট্রিক টন ভিজিএফ চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইলিশ ধরা বন্ধের সময় যাতে পার্শ্ববর্তী দেশের জেলেরা অবৈধভাবে মৎস্য আহরণ করতে না পারে সেজন্য কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী ব্যবস্থা নেবে।

সভায় জানানো হয়, মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফল করতে এ বছর ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। নৌপুলিশ এ বছর নদীতে ভাসমান ফাঁড়ি পরিচালনা করবে এবং সার্বক্ষণিক একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু রাখবে। বিমান বাহিনী আকাশপথে নজরদারি গত বছরের চেয়ে বাড়াবে এবং রাতে টহল জোরদার করবে। নৌবাহিনী ৯টি জাহাজের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করবে। 

বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ভারতীয় কোস্টগার্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে অভিযান পরিচালনা করবে, যাতে ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় মাছ ধরতে না পারে। স্থানীয় প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ বরফকল বন্ধ রাখা, বাজার মনিটরিং এবং স্থানীয় মৎস্যজীবী, রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে সচেতনতা ও প্রচারণামূলক ব্যবস্থা নেবে। মা ইলিশ সংরক্ষণে বাধা সৃষ্টি করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলেও সভায় জানানো হয়।

উল্লেখ্য, ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণে ‘প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ অ্যাক্ট, ১৯৫০’ এর অধীন প্রণীত ‘প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ রুলস, ১৯৮৫’ অনুযায়ী ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ। গত ২৬ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।  

২২ দিন সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় দণ্ডনীয় অপরাধ। এই আইন অমান্যকারী কমপক্ষে ১ থেকে সর্বোচ্চ ২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

এসএইচআর/জেডএস