রাজধানীর অদূরে আমিনবাজার কয়লাঘাট তুরাগ নদীতে যাত্রীবাহী ট্রলার ডুবির ঘটনায় শনিবার (৯ অক্টোবর) দিনভর উদ্ধার অভিযানে পাঁচ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। দুর্ঘটনায় নিখোঁজ মা-মেয়ের সন্ধানে রোববার (১০ অক্টোবর) ফের অভিযান পরিচালনা করে কাউকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

এ অবস্থায় অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছে নৌ বাহিনী, নৌপুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ'র উদ্ধারকারী দল। তবে এখনো লেগে আছে ফায়ার সার্ভিস, কোস্ট গার্ড।

ফায়ার সার্ভিসের দেওয়া তথ্যমতে, সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার গজারিয়া গ্রামের মো. সফিকুলের স্ত্রী রুপায়ন (৩০) ও তার মেয়ে জেসমিন (২) এখনো নিখোঁজ।

ফায়ার সার্ভিসের কর্তব্যরত কর্মকর্তারা বলছেন, নিখোঁজ দুইজনের সন্ধানে ফায়ার সার্ভিস কাজ করে যাচ্ছে। তবে তাদের খুঁজে বের করাটা খুবই কঠিন। স্রোতের কারণে তাদের মরদেহ দূরে কোথাও চলে যেতে পারে। আশপাশে সব স্থানে ডুবুরিরা কাজ করলেও তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

ফায়ার সার্ভিস সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে আমিনবাজার কয়লাঘাট তুরাগ নদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় একটি যাত্রীবাহী ট্রলার ডুবে যায়।

সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দফতর থেকে জেমিনি বোর্ডসহ ইটি গাড়ি, সদরঘাট নদী থেকে অগ্নিশাসক, স্পিডবোট ও সাভার ফায়ার স্টেশন থেকে উদ্ধারকারীরা দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করে।

নিখোঁজ সাতজনের সন্ধানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ পরিচালনা করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উদ্ধারকর্মীরা। অভিযানে এক নারী ও চার শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারা হলেন- আরমান (৪), মোছা. সায়লা বিবি (২০), রিপন (২), আরামিনা (৮) ও ফারহানা মনি(৫)। ফায়ার সার্ভিস দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই জীবিত কয়েকজনকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করেছেন বলে জানা গেছে।

ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক দিনমণি শর্মা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আলোর স্বল্পতা ও নদীর স্রোতের কারণে গতকাল সন্ধ্যায় স্থগিত করা হলেও আজ সকাল ৯টায় ফের শুরু হয় নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান। 

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিটিএ) সহকারী পরিচালক শেখ রবিউল ইসলাম বলেন, নিখোঁজ দুজনের সন্ধানে আজও উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। তবে দুপুর পর্যন্ত কারো সন্ধান না মেলায় অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ঘটনাস্থল থেকে ২ থেকে ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত নিখোঁজ মা-মেয়ের সন্ধানে টহল অব্যাহত থাকবে।

রোববার (১০ অক্টোবর) বিকেলে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড সদর দফতরের মিডিয়া কর্মকর্তা লে. খন্দকার মুনিফ তকি বলেন, আমাদের অভিযান এখনো চলছে। তবে দুই নিখোঁজের সন্ধান মেলেনি। চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত ফায়ার সার্ভিসের ঢাকার উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) আবুল বাশার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ সকাল সাড়ে আটটা থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। ঘটনাস্থলের বাইরে উদ্ধার কাজ চলছে।

নিহতের পরিবারকে অর্থ সহায়তা, হবে দুর্ঘটনার তদন্তও

তুরাগ নদে যাত্রীবাহী নৌকাডুবির ঘটনায় মারা যাওয়া পাঁচজনের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাভার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম।

যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তহবিল থেকে মারা যাওয়া প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। লাশ দাফনের জন্য এই সহায়তা দেওয়া হয়। পাশাপাশি এই নৌ দুর্ঘটনার কারণ কি তা খতিয়ে দেখতে ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত করে দেখা হবে।

জেইউ/জেডএস