সংগৃহীত ছবি

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ২৭ জানুয়ারি ঢাকায় একজন নার্সকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে করোনা টিকা প্রয়োগ শুরু হবে। পরে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসহ নানা বিষয় পর্যবেক্ষণ করে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে সারাদেশে একযোগে টিকাদান।

শনিবার (২৩ জানুয়ারি) রাজধানীর শ্যামলীতে কিডনি হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রথম টিকা দেওয়া হবে একজন নার্সকে। এছাড়া এদিন আরও ২৪ জনকে টিকা দেওয়া হবে। ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে কয়েকশ জনকে টিকা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে ৮ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে টিকাদান শুরু হবে।

সচিব বলেন, প্রথম দিনে টিকা প্রাপ্তদের তালিকায় করোনাভাইরাসের সময় কাজ করা সম্মুখযোদ্ধা স্বাস্থ্যকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, চিকিৎসক এবং সাংবাদিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।

মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ঢাকায় প্রথম দিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকা দেওয়া হবে। এদিন মোট ৪০০-৫০০ জনকে টিকা প্রয়োগ করা হবে। তাদের এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রাখার পর ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে টিকাদান শুরু হবে।

সারাদেশে কী পরিমাণ টিকা যাচ্ছে

সংক্রমণের হার ও জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় সারাদেশের কোন জেলায় কত সংখ্যক ভ্যাকসিন যাবে তা নির্দিষ্ট করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তারা জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে সারাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হবে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেছেন, ৫০ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ দেওয়া হবে।

জানা গেছে, দেশের ৬৪ জেলাতেই প্রথম ধাপে পর্যায়ক্রমে টিকা দেওয়া হবে। তবে ঢাকা জেলার জন্য রাখা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এ জেলায় বরাদ্দ রয়েছে ১২ লাখ ৫৪ হাজার ২০০ ডোজ। সবচেয়ে কম বরাদ্দ বান্দরবন জেলায়। জেলাটিতে ৪০ হাজার ৪৩৯ ডোজ টিকা দেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ডিস্ট্রিবিউশন প্ল্যানে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে টিকা দেওয়া হবে ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ৫৪৫ জনকে। চট্টগ্রাম বিভাগে দেওয়া হবে ২৯ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৩ জনকে, রাজশাহী বিভাগে ১৯ লাখ ২৪ হাজার ৯২২ জনকে, রংপুর বিভাগে ১৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫৯ জনকে, খুলনা বিভাগে দেওয়া হবে ১৬ লাখ ৩৩ হাজার ৬৪৬ জনকে, সিলেট বিভাগে দেওয়া হবে ১০ লাখ ৩২ হাজার জনকে এবং বরিশাল বিভাগে আট লাখ ৬৬ হাজার ৯৯৪ জনকে টিকা দেওয়া হবে। তিন রাউন্ডে এ জনগোষ্ঠী টিকা পাবেন।

কোন জেলায় কতজন টিকা পাচ্ছেন

জেলা পর্যায়ের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঢাকায় ১২ লাখ ৫৪ হাজার ২০০ জন, ফরিদপুরে এক লাখ ৯৯ হাজার ২০৭ জন, গাজীপুরে তিন লাখ ৫৪ হাজার ৪৬৭ জন, গোপালগঞ্জে এক লাখ ২২ হাজার ৯০ জন, জামালপুরে দুই লাখ ৩৮ হাজার ৭৪৮ জন, কিশোরগঞ্জে তিন লাখ তিন হাজার ২৩২ জন, মাদারীপুরে এক লাখ ২১ হাজার ৪১৬ জন, মানিকগঞ্জে এক লাখ ৪৫ হাজার ৪৬ জন, মুন্সীগঞ্জে এক লাখ ৫০ হাজার ৫৪৪ জন, নারায়ণগঞ্জে তিন লাখ সাত হাজার ১৩ জন, নরসিংদীতে দুই লাখ ৩১ হাজার ৬৯৫ জন, নেত্রকোনায় দুই লাখ ৩২ হাজার ১৮৪ জন, রাজবাড়ীতে এক লাখ নয় হাজার ৩১৯ জন, শরীয়তপুরে এক লাখ ২০ হাজার ৩৬২ জন, টাঙ্গাইলে তিন লাখ ৭৫ হাজার ৪১৬ মানুষ টিকা পাবেন।

বান্দরবনে টিকা পাবেন ৪০ হাজার ৪৩৯ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৫ জন, চাঁদপুরে দুই লাখ ৫১ হাজার ৫৯২ জন, চট্টগ্রামে সাত লাখ ৯৩ হাজার ১২৯ জন, কুমিল্লায় পাঁচ লাখ ৬১ হাজার ছয়জন, কক্সবাজারে দুই লাখ ৩৮ হাজার ৪৬৮ জন, খাগড়াছড়িতে ৬৩ হাজার ৯৩০ জন, লক্ষ্মীপুরে এক লাখ ৮০ হাজার ৬৯ জন, নোয়াখালীতে তিন লাখ ২৩ হাজার ৬৬০ জন, রাঙ্গামাটিতে ৬২ হাজার ৬২ জন।

ভোলায় টিকা পাবেন এক লাখ ৮৫ হাজার ২৭ জন, ঝালকাঠিতে ৭১ হাজার ৯০ জন, পটুয়াখালীতে এক লাখ ৫৯ হাজার জন, পিরোজপুরে এক লাখ ১৫ হাজার ৯২৯ জন, বরগুনায় ৯২ হাজার ৯৭০ জন, বরিশালে দুই লাখ ৪২ হাজার ৪২ জন।

এদিকে বাগেরহাটে এক লাখ ৫৩ হাজার ৭১৩ জন, চুয়াডাঙ্গায় এক লাখ ১৭ হাজার ৫৭০ জন, যশোরে দুই লাখ ৮৭ হাজার ৮৮৬ জন, ঝিনাইদহে এক লাখ ৮৪ হাজার ৪৫৫ জন, খুলনায় দুই লাখ ৪১ হাজার ৪৪০ জন, কুষ্টিয়ায় দুই লাখ দুই হাজার ৭৩৪ জন, মাগুরায় ৯৫ হাজার ৬৪০ জন, মেহেরপুরে ৬৮ হাজার ২৪৯ জন, নড়াইলে ৭৫ হাজার ১৫১ জন, সাতক্ষীরায় টিকা পাবেন দুই লাখ ছয় হাজার ৮০৮ জন।

বগুড়ায় টিকা পাবেন তিন লাখ ৫৪ হাজার ১৫০ জন, জয়পুরহাটে ৯৫ হাজার ১৫৫ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক লাখ ৭১ হাজার ৫৬৫ জন, নওগাঁয় দুই লাখ ৭০ হাজার ৭৬৮ জন, নাটোরে এক লাখ ৭৭ হাজার ৭২৫ জন, পাবনায় দুই লাখ ৬২ হাজার ৭৫১ জন, রাজশাহীতে দুই লাখ ৭০ হাজার ২৫১ জন, সিরাজগঞ্জে তিন লাখ ২২ হাজার ৫৫৭ জন।

রংপুরে তিন লাখ ২২ জন, দিনাজপুরে তিন লাখ ১১ হাজার ৩৭৭ জন, কুড়িগ্রামে দুই লাখ ১৫ হাজার ৪৮৪ জন, লালমনিরহাটে এক লাখ ৩০ হাজার ৮০৪ জন, গাইবান্ধায় দুই লাখ ৪৭ হাজার ৭৬৪ জন, নীলফামারীতে এক লাখ ৯১ হাজার আটজন, পঞ্চগড়ে এক লাখ দুই হাজার ৮৪৮ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে এক লাখ ৪৪ হাজার ৭৫২ জন টিকা পাচ্ছেন।

এছাড়া হবিগঞ্জে দুই লাখ ১৭ হাজার ৫৩৮ জন, মৌলভীবাজারে এক লাখ ৯৯ হাজার ৮৪২ জন, সুনামগঞ্জে দুই লাখ ৫৭ হাজার দুজন, সিলেটে তিন লাখ ৫৭ হাজার ৬১৯ জন করোনা টিকা পাবেন।

যেসব স্থানে দেওয়া হবে টিকা

করোনাভাইরাসের টিকা প্রয়োগের জন্য সরকার কিছু জায়গা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা/সদর হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, পুলিশ-বিজিবি হাসপাতাল ও সিএমএইচ, বক্ষব্যাধি হাসপাতালে এ টিকা দেওয়া হবে। এসব জায়গায় প্রথম ধাপের ৫০ লাখ ভ্যাকসিন দিতে ৭ হাজার ৩৪৪টি দল গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি দলে দুজন সরাসরি ভ্যাকসিন দেবেন এবং বাকি চারজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অন্যান্য কাজ করবেন।

টিআই/এমএইচএস