জাতীয় প্রেস ক্লাবে রোববার বক্তব্য রাখছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল / ছবি- ঢাকা পোস্ট

কুমিল্লার ঘটনাসহ সাম্প্রতিক সময়ে যেসব সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটেছে সেগুলো ‘উদ্দেশ্যমূলক’ বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, ধর্মান্ধ নয়। তারা ধর্মভীরু, যে যার ধর্ম পালন করেন। অন্য ধর্মের মানুষ একটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থকে নিয়ে এমনটি করবে— সেটি এ দেশের মানুষ বিশ্বাস করে না। এর পেছনে কী কারণ আছে, সেটি আমরা অবশ্যই খুঁজে বের করব। পরবর্তীতে আপনাদের জানাব।

‘যারা এগুলো করেছেন এবং যে উদ্দেশ্য নিয়ে করেছেন, তাদের সেই উদ্দেশ্য কোনোদিনই সফল হবে না। তাদের আমরা প্রতিহত করব’— বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

রোববার (১৭ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম’ আয়োজিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিনের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা শহরের একটি মন্দিরে কুরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে কয়েকটি মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়। পরে চাঁদপুর, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি জেলার মন্দিরে হামলা হয়। নিহত হন অন্তত ছয়জন। ৩৫ জেলায় মোতায়েন করা হয় বিজিবি।

কুমিল্লার ওই ঘটনার পর রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কুমিল্লার ঘটনা আমরা খুব সিরিয়াসলি দেখছি। নির্ভুল তদন্তের মাধ্যমে ঘটনাটা আপনাদের (সাংবাদিকদের) জানাব। শিগগিরই জানাব, আশা করছি। 

সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, কুমিল্লার ঘটনায় সন্দেহভাজন ২-৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসল যারা করেছে তাদের আমরা চিহ্নিত করে ফেলব, খুব শিগগিরই আপনাদের জানাতে সক্ষম হব।

সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে বক্তব্য রাখছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল / ছবি- ঢাকা পোস্ট

সচিবালয়ে ওই বক্তব্যের পর আসাদুজ্জামান খান কামাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এসে বলেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। এটি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ। আমরা দুর্বার ও অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছি। সবাইকে নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা সবসময় বলি, এ দেশ মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান— সকলের। অসাম্প্রদায়িকতার দেশ মনে ধারণ করি বলেই আমরা অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছি। 

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে অনেক কিছুই আপনাদের কানে এসেছে। অনেক কিছুই জেনেছেন, আরও জানবেন। কিন্তু যেহেতু তদন্ত চলছে তাই আমি আর মুখ খুলছি না।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাবেক আইজিপি শহীদুল হক বলেন, অতীতের ঘটনায় পরিষ্কার বুঝা যায় যে স্বাধীনতাবিরোধীরা গুজব ছড়িয়ে ফায়দা নিয়েছে। আমাদের বিকৃত মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, প্রগতিশীল রাজনৈতিক চর্চা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, শত শত লোক যেভাবে ওয়াজ করে, সেগুলোর অধিকাংশই কুরআন-হাদিসের ধারে-কাছে নাই। এবার কিন্তু হেফাজত মাঠে নামে নাই। তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে মনে হয়। তাদের মেইনস্ট্রিমে (মূলধারা) নিয়ে আসতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, সম্প্রতি যে ঘটনা ঘটেছে তা খুবই দুঃখজনক। এটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের ওপর আক্রমণ।

বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, কুমিল্লার ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয় যে আমরা সাংস্কৃতিক আন্দোলন করতে পারিনি। মিলেমিশে থাকার যে সংস্কৃতি তা বিভিন্ন মাদরাসায় শেখানো হয় না। বাবা-মা মারা গেলে এতিম সন্তানদের দায়িত্ব চলে যায় মাদরাসাগুলোর কাছে। সারাদেশের প্রতি উপজেলায় যেভাবে মসজিদ করে দেওয়া হয়েছে, সেভাবে শিশু নিকেতনও গড়ে তোলা উচিত।

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান, জাগো নিউজের সহকারী সম্পাদক ও কলামিস্ট ড. হারুন রশিদ, কলামিস্ট মিথুশিলাক মুরমু, আয়োজক সংগঠনের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস প্রমুখ।

এমএইচএন/এমএআর