ফায়ার সার্ভিসের খিলগাঁও স্টেশনের অফিসার মো. আব্দুল মান্নান

রাজধানীর কমলাপুরে বিআরটিসি বাস টার্মিনালের পাশে ওলিও অ্যাপারেলস লিমিটেড গার্মেন্টসে আগুনে প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ওলিও অ্যাপারেলস সূত্রে জানা গেছে, আগুনে প্রায় ৪৫ হাজার প্যান্ট পুড়ে গেছে। ফ্লোরের প্রায় ৫০ শতাংশ মেশিনের ক্ষতি হয়েছে। 

ওলিও অ্যাপারেলস গার্মেন্টসে এনভয় গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। রোববার (২৪ জানুয়ারি) আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর এনভয়ের চিফ প্রোডাকশন কোঅর্ডিনেটর হামিদুল হাসান কাজল জানান, আগুনে প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ছয়তলা বিল্ডিংটির সবটা জুড়ে ওলিও অ্যাপারেলস লিমিটেড গার্মেন্টস। আগুনে বিল্ডিংয়ের ছয় তলার ফ্লোর ছাড়া আর কোনো ফ্লোর ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ছয় তলায় রাখা প্রায় ৪৫ হাজার পিস প্যান্ট আগুনে পুড়ে গেছে। এছাড়া ফ্লোরে থাকা অনেক মেশিন আগুনের তাপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সকাল সাড়ে সাতটার দিকে গার্ডরা হালকা ধোয়া দেখতে পান।

এনভয়ের চিফ প্রোডাকশন কোঅর্ডিনেটর হামিদুল হাসান

হামিদুল হাসান কাজল বলেন, সকাল সাড়ে সাতটার দিকে সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খোলার সময় হালকা ধোয়া দেখতে পান। পরে ছয় তলায় গিয়ে তারা দেখেন আগুন লেগেছে। তখন সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসে ফোন দিয়ে আমাদের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে লেগে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এবং আমাদের লোকজন মিলে দ্রুতই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এনভয়ের চিফ প্রোডাকশন কোঅর্ডিনেটর হামিদুল হাসান

তিনি বলেন, আগুন মূলত কারখানার ছয়তলার সুইং কর্ণারে লেগেছে। সেখানে আমাদের তৈরি করা মালামাল রাখা হয়। পরে সেগুলো ওয়াশের জন্য পাঠানো হতো। এখানে আমাদের ৪৫ হাজার হাজার লেডিস এবং জেন্টস প্যান্ট ছিল।

নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না কী কারণে আগুন লেগেছে।

এনভয়ের চিফ প্রোডাকশন কোঅর্ডিনেটর হামিদুল হাসান।

আগুন লাগার কারণ কী হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সকাল ৮ থেকে কারখানার অপারেশন শুরু হয়, যা রাত ৮ টায় শেষ হয়। এরপর আমাদের কারখানায় আর কোনো কার্যক্রম চলে না। যখন সিকিউরিটি গার্ডরা কারখানা খোলেন তখনই তারা এসে আগুন দেখতে পান। তাই নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না কী কারণে আগুন লেগেছে। তবে ফায়ার সার্ভিসের তদন্তে আশা করি বিষয়টি জানা যাবে। আমরা ধারণা করছি, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে আগুন লেগে থাকতে পারে।

ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রাথমিক ভাবে বোঝা যাচ্ছে আমাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক কোটি টাকা হবে। সুইং কর্ণারে থাকা ৪৫ হাজার পিস লেডিস ও জেন্টস প্যান্ট পুড়ে গেছে। এছাড়া ফ্লোরে থাকা মোট মেশিনের ৫০ শতাংশ মেশিন আগুনের তাপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

১ ঘণ্টা ২০ মিনিটের চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট সকাল ৯টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে।

ফায়ার সার্ভিসের খিলগাঁও স্টেশনের অফিসার মো. আব্দুল মান্নান।

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের খিলগাঁও স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. আব্দুল মান্নান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ৭ টা ৪০ মিনিটে ফোন পাই। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খিলগাঁও ফায়ার স্টেশনের তিনটি ইউনিট ও ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তর থেকে সাতটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটের চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট সকাল ৯টায় সম্পূর্ণভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

তিনি বলেন, বিল্ডিংয়ের ছয় তলায় আগুন সীমাবদ্ধ থাকায় খুব দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে। এ ঘটনায় কেউ আহত বা নিহত হয়নি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আমরা খতিয়ে দেখছি। ঠিক কী কারণে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে সে বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।

আগুন নিয়ন্ত্রণে কারখানার পর্যাপ্ত নিজস্ব ইকুইপমেন্ট ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের কিছু ইকুপমেন্ট দেখেছি। তবে আমরা আমাদের নিজস্ব ইকুপমেন্ট দিয়েই আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছি।

এর আগে রোববার (২৪ জানুয়ারি) সকাল ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে ওই ভবনের ষষ্ঠ তলায় আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১০ ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে সকাল ৯ টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদরদপ্তর কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার কামরুল আহসান বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। ফায়ারকর্মীরা ডাম্পিং ও কুলিংয়ের কাজ করছেন। এরপর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ করবেন।

ডিউটি অফিসার আরও বলেন, আগুন ষষ্ঠ তলায় ও গার্মেন্টসে হওয়ায় অতিরিক্ত ইউনিট পাঠানো হয়েছিল। তবে সব ইউনিটের কাজ করতে হয়নি। আগুন লাগার কারণ ও সূত্রপাত জানার চেষ্টা করছে ফায়ার সার্ভিস।

এমএসি/এইচকে