সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ প্রতিবন্ধী ও দুস্থদের আর্থিক সহায়তার জন্য অর্থ বরাদ্দ করে থাকে বিভিন্ন সংগঠন ছাড়াও ব্যক্তি বিশেষের পকেটে ওই অর্থ যাচ্ছে। 

এমন অভিযোগ খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয় থেকে সংস্থাটির এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান চালায়। অভিযানে অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।

দুদকের সহকারী পরিচালক রাউফুল ইসলাম ও জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে একটি টিম অভিযান চালায় বলে সংস্থার জনসংযোগ দফতর সূত্র জানিয়েছে।

দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. শফি উল্লাহ অভিযানের বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করে বলেন, জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধী ও দরিদ্রদের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ অনিয়মের মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগ ছিল। যে কারণে আজ এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান চালায়। দুদক টিম সরেজমিনে সমাজ কল্যাণ পরিষদের কার্যালয় পরিদর্শন করে এবং অভিযোগের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বক্তব্য শুনেছে।

তিনি আরও বলেন, ২০১৯-২০ অর্থ বছরের বরাদ্দকৃত অর্থ সরাসরি পে-চেকের মাধ্যমে দুস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে বলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দুদক টিমকে অবহিত করেন। ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের বরাদ্দের তালিকা, ফোন নম্বরসহ প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে, যা বিস্তারিত যাচাই করে কমিশন বরাবর চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে এনফোর্সমেন্ট টিম।

অভিযোগের বিষয়ে আরও জানা যায়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ সারা দেশে প্রতিবন্ধী, দুস্থ, অসুস্থ, দরিদ্রদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য প্রতি বছর একটি বড় অংকের অর্থ বরাদ্দ দেয়। কিন্তু ওই বরাদ্দের টাকা বিভিন্ন সংগঠন ছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তির পকেটে যাচ্ছে। অনুদানের অর্থ ‘বাহক চেক’ এর মাধ্যমে ইস্যু করা হলেও দুস্থ, অসহায় , প্রতিবন্ধী, অসুস্থ ও দরিদ্র ব্যক্তিরা তা পান না। মোবাইল ফোন নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, ঠিকানাসহ আবেদনকারীর বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ থাকা অপরিহার্য হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা ছিল না। আর্থিক অনুদান পাওয়া শত শত বক্তির মধ্যে মাত্র গুটি কয়েকের ঠিকানা তারা দিতে পেরেছেন।

অভিযোগ ২০১৭-২০১৮ , ২০১৮-২০১৯ এবং ২০১৯-২০২০ এই তিন অর্থবছরে শত শত দুস্থ, অসহায়, দরিদ্র, প্রতিবন্ধী মানুষের নামে বিশেষ অনুদানের চেক ইস্যু হলেও তাদের অধিকাংশের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা নেই। মোবাইল ফোন নম্বর নেই। ব্যক্তি বিশেষকে দেওয়া অনুদানের প্রায় পুরোটাই লুটপাট ও আত্মসাত হচ্ছে।

বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ কর্তৃক স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহ ( নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ ) অধ্যাদেশ ১৯৬১ এর আওতায় নিবন্ধন প্রাপ্ত বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক সংস্থাসহ অতি দরিদ্র ব্যক্তিদের প্রতিবছর বিভিন্ন পরিমাণে অনুদান প্রদান করা হয় । স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসমূহের মধ্যে যে অনুদান প্রদান করা হয় তা মাঠ পর্যায়ে সমাজসেবা অধিদফতর কর্তৃক বাস্তবায়িত হয়।

জেলা সমাজকল্যাণ পরিষদ ও উপজেলা সমাজকল্যাণ পরিষদ মূলত মাঠপর্যায়ে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে থাকে। সমাজসেবা অধিদফতরের কর্মকর্তাগণ জেলা ও উপজেলা সমাজকল্যাণ পরিষদের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সংগঠন এবং ব্যক্তিবিশেষের সহায়তার জন্য প্রতি বছর সরকার জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদকে ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়; যা দরিদ্র, দুস্থ, অসহায় ও প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য বরাদ্দ। যেখানে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত এই খাতের অনুদান পেতে পারেন।

আরএম/এনএফ