সংসদে উত্থাপিত মেরিটাইম জোন আইন নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের মতামত নেবে সংসদীয় কমিটি। 

সংসদীয় কমিটির সভাপতি মুহম্মদ ফারুক খান এ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন। বঙ্গবন্ধুর সময়কার এই আইনটি যুগোপযোগী ও আধুনিক করতেই এই আইনটি আনা হয়েছে। এজন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবো। আমরা সংসদের লেজিসলেটিভ উইং, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী এবং মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে আইনটির রিপোর্ট চূড়ান্ত করবো। সংসদের আগামী অধিবেশনে যাতে এটা পাস করা যায় তার জন্য সংসদের বৈঠকের প্রথমদিনই চেষ্টা করবো প্রতিবেদন উত্থাপন করার।

জাতিসংঘের মহীসোপান নির্ধারণসংক্রান্ত কমিশনে (সিএলসিএস) বাংলাদেশের দাবির প্রেক্ষিতে ভারত যে আপত্তি তুলেছে তার প্রসঙ্গ টেনে কমিটির সভাপতি বলেন, আমাদের এই আইনটির সংশোধনী না থাকার কারণে তারা এই দাবিটি তুলতে পেরেছে। আইনটি থাকলে তারা হয়তো পারতো না।

সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- বৈঠকে টেরিটোরিয়াল ওয়াটার্স অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস (সংশোধন) বিল ২০২১ বিলটি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য তিন সদস্যের একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়।  

এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর সংসদে ‘টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোন (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০২১’ সংসদে উত্থাপন করা হলে তা ৪৫ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

সংসদে উত্থাপিত বিলটি আইনে পরিণত হলে অভ্যন্তরীণ জলসীমা ও রাষ্ট্রীয় জলসীমা, ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ৩৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানে সমুদ্র সম্পদের ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।

বিলে জলদস্যুতা, সশস্ত্র চুরি, সমুদ্র সন্ত্রাস নিয়ে জেলজরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় জলসীমায় চলাকালে কোনো বিদেশি জাহাজে অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধী গ্রেফতার ও তদন্ত পরিচালনায় এ আইন প্রযোজ্য হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় ১৯৭৪ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের মেরিটাইম অঞ্চলের সীমানা নির্ধারণ এবং সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণে ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম অ্যাক্ট ১৯৭৪’ প্রণয়ন করা হয়।

পরে ১৯৮২ সালে ‘ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য সি’ শীর্ষক কনভেনশন জাতিসংঘ গ্রহণ করলে একই বছর ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ তাতে স্বাক্ষর করে।

মানবপাচার রোধে বিদ্যমান আইন আরও শক্ত করার পরামর্শ দিয়েছে সংসদীয় কমিটি। কমিটি এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলতে বলেছে।

জানা গেছে, অবৈধভাবে ইউরোপীয় দেশে যেতে গিয়ে লিবিয়া থেকে ফেরত আসা ৩৫ ব্যক্তির জবানবন্দীর বিষয়টি কমিটিকে অবহিত করে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে তাদের কোয়ারেন্টাইনে রেখে তথ্য আদায় করা হয়েছে। তারা জানিয়েছে প্রত্যেকে ১০/১২ লাখ টাকা করে দিয়ে তুরস্ক ও লিবিয়া হয়ে ইতালি, জার্মানি বা ইউরোপের অন্য কোনো দেশে যেতে চেয়েছিল। তাদের অবৈধভাবে বিদেশে পাঠানো ৪/৫ জন ব্যক্তিরও নাম বলেছে।

এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, আমরা কমিটিতে বলেছি যাদের নাম বলেছে তাদের অন্তত আইনের আওতায় আনেন। এতে সবার মধ্যে একটা বার্তা যাবে। তিনি বলেন, যারা এভাবে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করে তারা ধরা পড়ে দেশে ফিরলে আমরা তাদের ছেড়ে দেই। এটা না করে তাদের আইনের আওতায় আনা হলে এভাবে কেউ যাওয়ার সাহস করবে না। এজন্য আমরা মন্ত্রনালয়কে বলেছি অসত্য তথ্য দিয়ে যারা বিদেশ যায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে আইনের বিধানগুলোকে আরও শক্ত করার পরামর্শ দিয়েছি।

মুহাম্মদ ফারুক খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. কে. আব্দুল মোমেন, প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, গোলাম ফারুক খন্দ. প্রিন্স, মো. আব্দুল মজিদ খান, মো. হাবিবে মিল্লাত, নাহিম রাজ্জাক, কাজী নাবিল আহমেদ। 

এইউএ/এনএফ