রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় বেশ কিছু সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) বা ময়লা-আবর্জনা রাখার কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। অনেকগুলো এসটিএস সড়ক সংলগ্ন স্থানে নির্মাণ করায় সাধারণ পথচারীদের চলাচলের সময় দুর্গন্ধে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

মূলত বাসা-বাড়ি থেকে আবর্জনা-ময়লা সংগ্রহ করার পর প্রাথমিকভাবে এসব এসটিএস-এ এনে জমা করা হয়। পরে ট্রাকে করে এসব বর্জ্য দুই সিটি করপোরেশনের ল্যান্ডফিলে নিয়ে যাওয়া হয়। এসব এসটিএস সড়ক সংলগ্ন হওয়ায় বর্জ্যবাহী গাড়িগুলো এসটিএস এ প্রবেশ এবং বের হওয়ার সময় সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন সড়ক ব্যবহারকারীরা।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সবগুলো ওয়ার্ডেই একটি করে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) বা ময়লা-আবর্জনা রাখার কেন্দ্র নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ইতোমধ্যে ৩৯টি বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়েছে। বাকিগুলোর নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। এ বছরের মধ্যেই বাকিগুলোর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশেনের আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় ইতোমধ্যে ৫৭টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মাণ করা হয়েছে। গত এক বছরে ৫টি এসটিএস নির্মাণ করেছে ডিএনসিসি। বর্তমানে আরো দুটি এসটিএস নির্মাণাধীন রয়েছে। 

এসব এসটিএসগুলোর মধ্যে বেশ কিছু এসটিএস মূল সড়ক সংলগ্ন স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে। এতে করে দুর্গন্ধের দুর্ভোগ পোহাতে হয়  চলাচলকারীদের। গুলশান লেক সংলগ্ন সড়কের পাশে এমন এক এসটিএস বিষয়ে এই এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা এলাকাবাসী ও পথচারীরা আসলেই খুব ক্ষুব্ধ। রাস্তার পাশে এমন আবর্জনা রাখার স্থান কেন বানালো সিটি করপোরেশন? পুরো এলাকার বাসাবাড়ির বর্জ্য এখানে এনে ফেলা হয়, এসটিএসের ভেতর জুড়ে ময়লার স্তূপ হয়ে থাকে। এই পথ দিয়ে যারাই যায় তাদের নাক চেপে ধরে যেতে হয়। দুর্গন্ধের দুর্ভোগ নিয়ে পার হতে হয়। 

তিনি আরো বলেন, শুধু তাই নয়, দিন শুরু হওয়ার পর থেকে ভ্যানযোগে ময়লা এনে ফেলা হয় এসব এসটিএসের ভেতরে। আবার এসব ময়লা বিশেষ গাড়ি দিয়ে ট্রাকে লোড করা হয়। এরপর এসব ময়লা গাড়ি করে ল্যান্ডফিলে নিয়ে যাওয়া হয়। এসব গাড়ি যখন এসটিএসের ভেতরে ঢুকে এবং বের হয় তখন এসব সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এমন ভোগান্তি এসব সড়কের পথচারী ও  এলাকাবাসীর নিয়মিত পোহাতে হয়। আমরা চাই এসব এসটিএসগুলো মূল সড়কের পাশ থেকে সরিয়ে অন্য কোথাও নিয়ে যাক সিটি করপোরেশন, আর এমন দুর্ভোগ থেকে আমাদের মুক্তি দিক।

রাজধানীর মালিবাগ, বনশ্রী, শান্তিনগর, নতুনবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে এসব এসটিএসগুলো রাস্তা সংলগ্ন হওয়ায় এ সড়ক ব্যবহারকারীরা দুর্গন্ধ আর যানজটের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে, জনস্বার্থে এগুলোর বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সিটি করপোরেশনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। 

মালিবাগ ফ্লাইওভারের নিচে এমন এসটিএস বিষয়ে সাজ্জাদ হোসেন নামের একজন পথচারী বলেন, রাজধানীর অনেক সড়কের পাশেই এমন ময়লা রাখার স্থান বানানো হয়েছে। এমন সব এসটিএসের কারণে সেসব সড়ক দিয়ে দুর্গন্ধে যাওয়া যায় না। আবর্জনার দুর্গন্ধে নাকে রুমাল ধরে যেতে হয়। যে শহরে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য এত সব কাজ চলছে, সড়কের পাশেই যদি ময়লা আবর্জনা রাখার স্থান করা হয় তাহলে সকল ভালো উদ্যোগ ম্লান হয়ে যায়। কষ্ট পেতে হয় আমাদের মতো পথচারীদের। সেই সঙ্গে ময়লা পরিবহনের গাড়িগুলো এসব এসটিএসএ ঢোকা এবং বের হওয়ার সময় সামনে পিছনের সড়কে যানজটেরও সৃষ্টি হয়। এটিও এক ভোগান্তির কারণ।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এনামুল হক বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডেই এসটিএস নির্মাণ করা হচ্ছে। ময়লা আবর্জনা রাখার জন্য সব এলাকাতেই এসটিএস নির্মাণ করা জরুরি। এতে করে শহর পরিচ্ছন্ন থাকবে। সে দৃষ্টিকোণ থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে এসটিএস নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে এজন্য জায়গা পাওয়া খুব কঠিন। তাই যেসব স্থানে জায়গা ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোতে এসব এসটিএস নির্মাণ করা হচ্ছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, খোলা জায়গায় বর্জ্য রেখে অপসারণের যে ব্যবস্থা ছিল আগে, তা তারা রহিত করেছে। সে লক্ষ্যে তারা ইতোমধ্যে ৫৭টি এসটিএস নির্মাণ করেছে। আগে তারা খোলা ট্রাকের  মাধ্যমে বর্জ্য পরিবহন করত। কিন্তু বর্তমানে ২৪টি কম্পেক্টর, ৩৪টি কন্টেইনার ক্যারিয়ার এবং ১৭টি ডাম্প ট্রাক সংযোজনের মাধ্যমে বর্জ্য পরিবহন করছে।

অন্যদিকে, সম্প্রতি একটি অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্রের উদ্বোধন শেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই যেন এই বর্জ্য সংগ্রহ করে সরাসরি কেন্দ্রীয় ভাগাড়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেই প্রক্রিয়া, সেই ব্যবস্থাপনায় আমরা নজর দিয়েছি। আমরা ওয়ার্ডভিত্তিক বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র নির্মাণ করছি। আমরা ওয়ার্ডভিত্তিক বর্জ্য সংগ্রহকারীও নিবন্ধন করেছি, যাতে করে তাদের মাধ্যমে সরাসরি বাসাবাড়ি ও স্থাপনা থেকে বর্জ্য নিয়ে আসতে পারি। এছাড়াও আমরা আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করছি। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে ১৫টি ১০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ও ১৫টি ৭ টন ক্ষমতাসম্পন্ন মোট ত্রিশটি কম্পেক্টর ভেহিকেল ক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

তিনি আরো বলেন, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও ওয়ার্ডভিত্তিক অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে ঢাকাবাসীকে সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উপহার দেওয়া হবে। এতে করে খুব অল্প সময়ে বর্জ্য আমরা মাতুয়াইল কেন্দ্রীয় ভাগাড়ের নিয়ে যেতে সক্ষম হব। এতে কম সময়ে বেশি পরিমাণ বর্জ্য অপসারণে আমাদের সক্ষমতা বাড়বে। সুতরাং বর্জ্য যেখানে স্তূপাকারে থাকে সেখানে বাছাইয়ের মাধ্যমে যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়, তার সুযোগ অনেকাংশে কমে যাবে। আমরা ৩৯টি বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র নির্মাণ সম্পন্ন করেছি। বাকিগুলোর নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। আশা করছি, এ বছরের মধ্যেই আমাদের ৭৫টি ওয়ার্ডে বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র করতে পারব। 

এএসএস/এইচকে