ভোটারদের তথ্যের নিরাপত্তায় বসছে আরও দুটি সার্ভার
এনআইডি বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলাম
ভোটারদের তথ্য সংরক্ষণজনিত নিরাপত্তার বিষয়টি আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্র অণুবিভাগ (এনআইডি)। এর জন্য বর্তমান সার্ভারের আপডেটসহ নতুন করে গাজীপুরের কালিয়াকৈর ও যশোর হাইটেক পার্কে সার্ভার বসানো হবে।
এনআইডি বিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলাম এসব কথা জানিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে এনআইডির সব কার্যক্রম চলছে ২০১১ সালের একটি সার্ভারের মাধ্যমে। পুরনো সার্ভার দিয়ে এনআইডি ও পার্টনারদের সার্ভিসসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা দুরূহ হয়ে পড়েছে। বর্তমানে এ সার্ভারের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সব কাজ একসঙ্গে করতে গেলে সার্ভার স্লো হয়ে যায়।’
মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান সার্ভারটি চতুর্থ অর্গানাইজেশনের জন্য তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সার্ভারটি এখন কয়েক হাজার অর্গানাইজেশনকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। যেমন- এর আগে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ছিল না, ইভিএমের পুরো কাস্টমাইজেশন হচ্ছে এ সার্ভারের মাধ্যমে। ভোটার তালিকার সঙ্গে সামঞ্জস্য করে ইভিএমের কাস্টমাইজেশন করা হচ্ছে। এজন্যই মাঝে মাঝে সার্ভার স্লো থাকে। এরপরও সার্ভারের চাপগুলো আমরা টেকনিক্যালি নিয়ন্ত্রণ করি।’
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ‘নিজেদের সক্ষমতায় সার্ভারের যে সমস্যা ছিল সেগুলো সমাধান করেছি। এত সমস্যার পরও আমরা সার্ভার মেনটেন্যান্সে কোনো বিদেশি কোম্পানির সহযোগিতা নেইনি। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সার্ভার তথা এনআইডির সব কার্যক্রম থেকে বিদেশি সম্পৃক্ততা পরিহার করেছি। এটা আমাদের বড় অর্জন।’
এক প্রশ্নের জবাবে এনআইডি ডিজি বলেন, ‘বাকি ভোটারদের স্মার্ট কার্ড দিতে ইতোমধ্যেই আইডিএ-২ প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এ প্রকল্পের মাধ্যমে যাদের স্মার্ট কার্ড দেয়া হবে সেই কার্ডগুলো দেশেই তৈরি করা হবে। দেশের উৎপাদিত কার্ড নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে ভবিষ্যতে বিদেশে রপ্তানি করা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে ইউনিক আইডি নিয়ে অনেকবার কথা বলেছি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিআরবিএস-এর আওতায় ইউনিক আইডির কাজটা আমরা করে দেব। মূল কথা ইউনিক আইডি জেনারেট করব আমরা, আর ব্যবহার করবে জন্ম নিবন্ধন। এজন্যই কিন্তু আমাদের সক্ষমতা বাড়াচ্ছি। সেইসঙ্গে পার্টনার সার্ভিস ১৪০টি থেকে ১৪২টি হয়েছে। ভবিষ্যতে পার্টনার সার্ভিস ৩০০ উপরে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য রয়েছে।’
‘অনলাইন সেবা চালু হওয়ার পর সংশোধনের ফাইল আটকে থাকে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে তো ফাইলের কোনো খবর থাকত না। এনআইডির নিজস্ব মনিটরিং টিম রয়েছে। এছাড়া ১০টি অঞ্চলের জন্য ১০টি মনিটরিং টিম করে দেয়া আছে। মনিটরিং টিমটা কাজ শুরু করছে। তারপরও আমি বলব, যেকোনো কাজ লাইনে আনতে সময় লাগে। সিস্টেমের কারণে সবাই ভালো হতে বাধ্য হচ্ছে।’
সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘কুষ্টিয়ার কেসটা দেখলেই বুঝতে পারবেন। একদিকে সিস্টেম, মনিটরিং এবং যারা সিস্টেম মানবে না তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যারা এনআইডি নিয়ে অনিয়ম করছে, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। পর্যায়ক্রমে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুষ্টিয়ার ঘটনার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেব আমরা। এখন অনলাইন সেবা হওয়ার পর থেকে অনলাইনে গেলেই দেখা যাচ্ছে কার কাছে ফাইলটি আছে। তাছাড়া একটি প্রতিষ্ঠান তো রাতারাতি বদলাতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘একদিকে সার্ভারের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। অন্যদিকে বিকেন্দ্রিকরণ করা হচ্ছে। এরইমধ্যে অনলাইন সিস্টেম নিয়ে আসা হয়েছে এবং যারাই এনআইডি সেবার ব্যত্যয় ঘটাবে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। এ কাজগুলো যেকোনো অর্গানাইজেশন করতে পারলে তারা সাফল্য পাবেই। আমরা ঠিক এই কাজগুলোই করেছি। বর্তমানে এনআইডির কর্মকর্তা ১৫ জন। ১৫ জন মিলে ১১ কোটির দায়িত্ব কীভাবে নিচ্ছি? এই ১৫ জনের মধ্যে থেকেই অনেক কর্মকর্তা বিভিন্ন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করে। এত অল্প জনবল নিয়ে কীভাবে বিশাল এ কর্মযজ্ঞটি পরিচালনা করছি এবং ইভিএমগুলোও মেনটেন্যান্স করছি? সেটাও চিন্তা করতে হবে।’
এসআর/এফআর