সরকারি হাসপাতালগুলোতে কম টাকায় সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। সব জনপ্রতিনিধিদের নিজ নিজ এলাকার সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে যদি আমরাই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না নেই, তাহলে সাধারণ মানুষ কীভাবে সরকারি স্বাস্থ্য সেবায় আস্থা রাখবে?

সোমবার (২৫ অক্টোবর) কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, গত ২১ জুন আমি করোনা আক্রান্ত হলে আমাকে বলা হয়েছিল যেন সিএমএইচে গিয়ে ভর্তি হই। কিন্তু নগরপিতা বা নগর সেবক হিসেবে আমি ভাবলাম আমার জনগণ কোথায় চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। জনগণ যে হাসপাতালের সেবা নেবে, আমিও সেই হাসপাতালেই সেবা নেব। সবমিলিয়ে দেখলাম যে, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল আমার উত্তর সিটি করপোরেশনের মধ্যে। তাই আমি অন্য কোথাও না গিয়ে এই হাসপাতালেই ভর্তি হই। তখন আমার মেয়ে গর্ভবতী ছিল, সেও কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়।

মেয়র আতিক বলেন, আমরা জানি সরকারি হাসপাতাল নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা নেগেটিভ ধারণা রয়েছে। কিন্তু এখানে ভর্তি হওয়ার পর আমি যে চিকিৎসা সেবা পেয়েছি, আমি চিকিৎসক, নার্সসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীদের স্যালুট জানাই। এতো সুন্দর চিকিৎসা সেবা রেখে আমরা শুধু শুধুই এদিক-সেদিক দৌড়াই, বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাই।

তিনি আরও বলেন, আমি এই হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সময়ে যে খাবার পেয়েছি, যে চিকিৎসা সেবা পেয়েছি, আমি আর লোভ সামলাতে পারিনি। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে বসেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি। এরপর আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গেও কথা বলেছি।

আতিকুল ইসলাম বলেন, আমি যেখানেই যাই, প্রতিটি অনুষ্ঠানেই এই হাসপাতালে উদাহরণ দেই। একইসঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের বলি তারা যদি তাদের নিজ নিজ এলাকার হাসপাতালে যায়, তাহলে সে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, নার্স, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা আরো বেশি উৎসাহ পায়। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি সবসময় অন্য কোনো বেসরকারি হাসপাতালে না গিয়ে আমার এলাকার হাসপাতালে যাব।

কুর্মিটোলা হাসপাতাল পরিচালককে উদ্দেশ করে মেয়র আরও বলেন, আমি এখানে চিকিৎসা সেবা নেওয়ার পর আমার পরিচিত অনেকেই যারা অন্যান্য সব হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে, কিন্তু সেগুলোতে না গিয়ে সরকারি হাসপাতালে বিশেষ করে কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। যে কারণে আমরা দেখেছি মাঝখানে এই হাসপাতালে রোগীরা কিছুটা চাপ বেড়ে গিয়েছিল। হাসপাতাল পরিচালককে বলব- এতে আমার কোনো দোষ নেই। আপনারা আমাকে কম টাকার মধ্যে যে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন, এটা হচ্ছে সবচেয়ে ভালো সার্ভিস, সর্বোচ্চ চিকিৎসা এবং সবচেয়ে সুন্দর ব্যবস্থাপনা। আর এ কারণেই লোকজন আপনার হাসপাতালে এসে ভিড় জমিয়েছে।

তিনি বলেন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এখন একটা ব্র্যান্ড হয়ে গিয়েছে। আমার মনে হয় এরকম ব্র্যান্ডিং আরো করতে হবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি যারা আছেন, তাদের সবাইকে অনুরোধ করব নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজ এলাকার স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও হাসপাতালকে তুলে ধরুন। এতে সাধারণ মানুষও আস্থা পাবে।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) আহবায়ক ডা. মাে. বাহাউদ্দিন মােল্লা বাদলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ, হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদ।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডা. সরকার মোহাম্মদ শাহাদৎ হােসেন, ডা. মুহাম্মদ ফজলুল হক, ডা. স্বদেশ বর্মন ও ডা. মাে. রাকিবুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালন দায়িত্বে ছিলেন হাসপাতালটির জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আল-মামুন শাহরিয়ার ও মেডিকেল অফিসার ডা. আয়েশা সিদ্দিকা।

টিআই/জেডএস