চাকরি না পাওয়ার আশঙ্কাজনিত হতাশা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র মো. আদনান সাকিব আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বলে ধারণা তার সহপাঠী ও পুলিশের।

আদনান ঢাবির শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে থাকতেন। তার রুমমেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, আদনান হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। তিনি সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত ছিলেন। ১০ মিনিট আগে কী করেছিলেন সেটাও মনে রাখতে পারতেন না। তিনি পড়ালেখাও করতে পারতেন না। এজন্য চাকরি পাওয়া নিয়ে হতাশা ছিল তার। 

সাইফুল বলেন, আমরা তাকে অনেক বুঝিয়েছি। দুই বছর আগে গার্হস্থ্য অর্থনীতির ছাত্রী নুসরাত আফরিনকে বিয়ে করে সে। তার সাথে আদনানের কোনো সমস্যা দেখিনি। তার একটাই চিন্তা ছিল, ভালো চাকরি। চাকরি পাবে না এই হতাশায় সে আত্নহত্যা করে থাকতে পারে বলে আমাদের ধারণা।

আদনানের বড় ভাই মো. মাহে আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা দুই ভাই, তিন বোন। সে ছিল সবার ছোট। তবে সে আত্মহত্যা করবে, ভাবতে পারিনি।

শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আজিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আদনান ভালো ছাত্র ছিল। গত পরশু সে নিখোঁজ হয়। গতকাল আমরা তার স্ত্রীকে নিয়ে থানায় জিডি করি। পরে খবর পেলাম আমাদের প্রিয় ছাত্রের লাশ আবাসিক হোটেলে ঝুলছে।  

শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) পলাশ সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বুধবার রাত ৯টায় তার স্ত্রী নুসরাত আফরিন থানায় এসে জানান তার স্বামী আদনানকে দুইদিন ধরে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে তার স্ত্রী শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর আদনানের মোবাইলের লোকেশন ট্র্যাক করলে সেগুনবাগিচা এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে তার লোকেশন দেখায়। কিন্তু সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে পাশের কর্ণফুলী আবাসিক হোটেলে গেলাম। রিসিপশনে জানতে চাইলাম এই নামে কেউ আছে কি না, তারা বলল আছে। ওই হোটেলের ১০৭ নম্বর রুম থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় আদনানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।  

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, আদনান একটি সুইসাইড নোট লিখে গেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন- তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি তিনি হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেছেন।

আদনান ঢাবির ২০১৪-১৫ সেশনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তাঁর স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পড়াশোনা চলছিল।

এর আগে চলতি বছরের মে মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। মৃত্যুর এক সপ্তাহের বেশি সময় পর হাফিজুরের মরদেহ শনাক্ত করে তার পরিবার। হাফিজ এলএসডি নামে একটি মাদক নিয়ে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিলেন বলে জানা যায়।  

এরপর জুন মাসে আজিমপুর সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারের একটি বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান তুষ্টির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমা ছিল বলে জানা যায়। 

আর সেপ্টেম্বরে চানখারপুলের একটি বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মাসুদ আল মাহাদী অপুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। অপুর রুমমেটরা মনে করেন অপু আত্মহত্যা করেছিলেন।  

এসএএ/এনএফ/জেএস