মো. শামীম রেজা (৩০) রাজশাহীর স্থানীয় স্কুলে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। ২০০৫ সালে ঢাকায় আসেন। তখন চাকরি শুরু করেন সাভারের একটি গার্মেন্টসে। মাদক গ্রহণ শুরুর পর ধীরে ধীরে নিজেই নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন মাদকের হাব ও ব্যবসা। এক পর্যায়ে গড়ে তোলেন ডাকাত চক্র। 

পুলিশ সেজে অভিনব পন্থায় চক্রটি একের পর এক ডাকাতি শুরু করে। পুলিশের ইউনিফর্ম ব্যবহার করে ডাকাতি করা চক্রটি গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় অন্তত ৮টি ডাকাতি করেছে। এ সময় পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে পরিচয় দিতেন মাদকাসক্ত ডাকাত শামীম। 

পুলিশ সেজে ডাকাতির প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ঢাকার সাভার থানার রাজাশন থেকে ভুয়া এসআই আমিনুল ওরফে শামীমসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। 

গ্রেফতার অন্যরা হলেন হেলাল উদ্দিন (৩৫), মো. পারভেজ (২৫), ওয়াসিম ইসলাম (২৫), নাইম খান (২৭), ফেরদৌস আহমেদ রাজু (২৯)।

র‍্যাব-৪ এর একটি গোয়েন্দা দল ২৮ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) থেকে ২৯ অক্টোবর (শুক্রবার) সকাল পর্যন্ত সাভার মডেল থানার পশ্চিম রাজাশন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করে। 

এ সময় একটি পিস্তল, গুলি, একটি নকল পিস্তল, পিস্তল টাইপ লাইটার, কভারসহ হ্যান্ডকাফ, ওয়াকিটকি, ২ সেট পুলিশ ইউনিফর্ম, পুলিশ জ্যাকেট, পুলিশ বেল্ট, ভুয়া পুলিশ আইডি কার্ড, দুটি রামদা, একটি ডেগার, একটি চাপাতি, দুটি ছুড়ি, দুটি টর্চলাইট, দুটি রশি, ৪৬৭ পিস ইয়াবা, ৩০ বোতল ফেনসিডিল, দেড় কেজি গাঁজা, ৭ গ্রাম হেরোইন, ৫ লিটার চোলাই মদ, ১৯টি মোবাইল এবং নগদ ৪৪ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।

শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক। 

তিনি বলেন, গ্রেফতার শামীম রেজা কিশোর বয়স থেকেই অপরাধ কার্যক্রমে জড়িত। তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহী। সে গ্রামের একটি স্থানীয় স্কুল থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করে কর্মের জন্য ২০০৫ সালে ঢাকায় আসে। সে গার্মেন্টসে চাকরি করে। মাদকাসক্ত হওয়ায় মাদক কারবারিদের সঙ্গে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সে পর্যায়ক্রমে তার নেতৃত্বে একটি ডাকাত বাহিনী গড়ে তুলে।

সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রটি রাতের আধারে পুলিশের ভুয়া ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় টর্চ লাইট দিয়ে গাড়ি থামিয়ে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার, মোবাইল এবং দামি জিনিসপত্র লুট করত। 

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, শামীম ২৫-৩০টি অটোরিকশা ও সিএনজির মালিক। তার নামে অস্ত্র, মাদক ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। সে নিজেকে আমিনুল হক নামে পুলিশের এসআই (উপ-পরিদর্শক) পরিচয় দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় অস্ত্র, নকল আগ্নেয়াস্ত্র, নকল আইডি কার্ড, ইউনিফর্ম, ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করে বিভিন্ন মানুষের সাথে প্রতারণা ও চাঁদাবাজি করতেন। সাভার এলাকায় সক্রিয় ডাকাত চক্রের পাশাপাশি ও মাদকের হাব নিয়ন্ত্রণ করতেন।

জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, তিনি বিভিন্ন সময়ে ভুয়া পুলিশ অফিসার সেজে চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে মিথ্যা ও বানোয়াট ভাবে ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করতেন। গ্রেফতার শামীমসহ গ্রেফতার সকলের বিরুদ্ধে সাভারসহ বিভিন্ন থানায় চাঁদাবাজি, মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। 

শামীম পুলিশ পরিচয়ে কতদিন ডাকাতি করে আসছিল জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক বলেন, ৩/৪ বছর ধরে ডাকাতদল পরিচালনা করছে। সে নিজেকে এসআই পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করছে দুই বছর। এরমধ্যে সে ৮/৯টি ডাকাতি করেছে মর্মে তথ্য মিলেছে। নিজের এলাকা রাজশাহীতে সে জমি-জমা করেছে। সাভারে গ্যারেজ আছে। সেখানে ৩০টি সিএনজি আছে। এর আগে শামীম রেজা প্রতারণা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছে।

পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি ও পুলিশের ইউনিফর্ম সংগ্রহ সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব-৪ সিও বলেন, সুনির্দিষ্ট পরিচয় ছাড়া পুলিশের পোশাক বিক্রির সুযোগ নেই। এরপরেও কোনো ফাঁকে পুলিশের পোশাক সংগ্রহ করেছে। এসআই পরিচয়ে পুলিশের পোশাক পড়ে ডাকাতির ঘটনায় পুলিশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। পুলিশের পোশাক সংগ্রহের ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনী বা অন্য কারো যোগসাজশ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। 

জেইউ/এইচকে