পণ্যের গুণগতমান ও উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনার তাগিদ রাষ্ট্রপতির
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী নতুন নতুন প্রযুক্তি দেশে উৎপাদিত শিল্পপণ্য আর্ন্তজাতিক বাণিজ্যের তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হচ্ছে। তাই পণ্যের গুণগতমান নিশ্চিতে পাশাপাশি উৎপাদনেও বৈচিত্র্য আনতে হবে। একই সঙ্গে নির্দিষ্ট কোনো পণ্য বা সেবা খাতের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক গতিধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিল্পোৎপাদনে বহুমুখী ধ্যান-ধারণা প্রয়োগ করার তাগিদ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার ২০১৯’ প্রদান অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তায় রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
দেশের বেসরকারিখাতে শিল্প স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৬ ক্যাটাগরিতে ১৯টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার দিয়েছে সরকার। ২০১৯ সালের জন্য এসব পুরস্কার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের কাছে তুলে দেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। এসময় উপস্থিত ছিলেন শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা।
রাষ্ট্রপতি বক্তব্যের শুরুতে স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যিনি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ উপহার দিয়ে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন দেশের সব সূর্যসন্তান, ভাষা শহীদসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের।
বিজ্ঞাপন
রাষ্ট্রপতি বলেন, কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে অর্থনীতির প্রাণ কৃষি হলেও দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কৃষির পাশাপাশি শিল্পখাতের উন্নয়ন অনস্বীকার্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৬ সালে কোয়ালিশন সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও গ্রাম সহায়তা দফতরের মন্ত্রী থাকাকালে অর্থনৈতিক বৈষম্য নিরসনকল্পে তৃণমূল পর্যায়ে শ্রমঘন শিল্পপ্রতিষ্ঠার সূচনা করেন।
‘স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে অন্যান্য সেক্টরের মতো শিল্পখাতও ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শিল্প খাতকে মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর জন্য বঙ্গবন্ধু দেশীয় কাচাঁমাল নির্ভর শিল্প কারখানা গড়ে তোলার মাধ্যমে শিল্পায়নের ধারাকে বেগবান করার উদ্যোগ নেন। তিনি সব বৃহৎ শিল্প কারখানা জাতীয়করণ করে এসব শিল্প কারখানা ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনের আলোকেই বর্তমানে বাংলাদেশের শিল্পায়নের ধারা এগিয়ে যাচ্ছে।’
আবদুল হামিদ বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শিল্পোন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার’ প্রদান একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। বেসরকারি খাতের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় প্রতি বছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এ পুরস্কার দিয়ে আসছে। আমি সম্মাননাপ্রাপ্ত সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং শিল্পোদ্যোক্তাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। আমি আশা করি, এ উদ্যোগ জ্ঞানভিত্তিক শিল্পায়নের চলমান ধারাকে আরও সুসংহত করবে এবং সামগ্রিক জাতীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ইতিবাচক অবদান রাখবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, উন্নয়নের জন্য কর্মসংস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সরকারের একার পক্ষে বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান করা সম্ভব নয়। কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ। সরকার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০০টি ইকোনোমিক জোন গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে। এর মাধ্যমে ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এসব ইকোনোমিক জোনের একটি বড় অংশ বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। ইকোনোমিক জোনে শিল্প স্থাপন করা হলে কর রেয়াতসহ প্রদেয় বিভিন্ন প্রণোদনা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সমভাবে ভোগ করবেন।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী নতুন নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগ বেড়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এর ফলে দেশে উৎপাদিত শিল্পপণ্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হচ্ছে। তাই পণ্যের গুণগতমান নিশ্চিত করার পাশাপাশি উৎপাদনেও বৈচিত্র্য আনতে হবে। নির্দিষ্ট কোনো পণ্য বা সেবা খাতের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক গতিধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিল্পোৎপাদনে বহুমুখী ধ্যান-ধারণা প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া শিল্পায়নের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশের ব্যাপারেও যত্নশীল হতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০২৬ সালে চূড়ান্তভাবে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে। তখন অন্যান্য সেক্টরের মতো শিল্প খাতের জন্য যেমন নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে, আবার বেশকিছু চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখন থেকেই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শিল্পোদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনী চিন্তা-ভাবনা ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে হবে।
এসআই/এসএম