জ্বালানি তেলের দাম কমানো অথবা ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো চলছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের ধর্মঘট। ফলে আজও গণপরিবহন শূন্য রাজধানীর সড়ক। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

রোববার (৭ নভেম্বর) রাজধানীর নিউমার্কেট, সাইন্স ল্যাবরেটরি, বাটা সিগন্যাল, কাঁটাবন এবং শাহবাগ মোড় ঘুরে দেখা যায়, শুক্রবার এবং শনিবারের তুলনায় সড়কে বেড়েছে মানুষের উপস্থিতি। যানবাহন না থাকায় পায়ে হেঁটে, রিকশা, সিএনজি বা মোটরসাইকেলে গন্তব্যের দিকে যেতে দেখা যায় এসব মানুষকে।

সাইন্স ল্যাবরেটরি মোড় থেকে মতিঝিল যাওয়ার জন্য রিকশা ভাড়া দরদাম করছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত আব্দুল মমিন। তিনি বলেন, আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ। সময়মতো অফিসে যেতে না পারলে অসুবিধায় পড়তে হবে। গতকালও অনেক কষ্টে বেশি ভাড়া দিয়ে অফিসে পৌঁছেছি এবং অফিস থেকে আবার বাড়ি এসেছি। ভেবেছিলাম ধর্মঘট ছেড়ে দেবে। কিন্তু আজও দেখছি একই অবস্থার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সড়কে কোনো গাড়ি নেই। এমন হলে আমাদের মতো গরিব মানুষের বেঁচে থাকার উপায় নেই।

তবে চাকরিজীবীদের চেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়েছে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়মিত কার্যক্রম ক্লাস, পরীক্ষা চলছে। ধর্মঘটের মধ্যেই চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা। তাই শত ভোগান্তি মাথায় নিয়েই কেন্দ্রে আসতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।

নারায়ণগঞ্জের জালকুড়ি থেকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিতে ঢাকা কলেজ কেন্দ্রে এসেছেন ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন। তিনি বলেন, অন্যান্য দিন বাড়ি থেকে সহজেই এসে পরীক্ষা দিতে পেরেছি। কিন্তু ধর্মঘটের কারণে অনেক ভোগান্তির মাধ্যমে আসতে হয়েছে। সিএনজি, রিকশা কিছুটা পথ পায়ে হেঁটে তারপর এসেছি। আর বাড়তি ভাড়া তো আছেই। আমাদের কথা কলেজ প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেউ চিন্তা করে না।

তবে গণপরিবহন শূন্য সড়কে মানুষের চলাচলে কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে বিআরটিসির দ্বিতল বাস। সকালে শাহবাগ মোড় ঘুরে দেখা যায়, কিছু সময় পর পরই একটি দুটি করে বিমানবন্দর, টঙ্গী, শ্যামলীগামী বিআরটিসি বাস আসছে। বাস আসা মাত্রই তাড়াহুড়ো করে বাসে উঠছেন অপেক্ষমাণ মানুষ। ধর্মঘটেও বিআরটিসির বাস চলাচল করায় স্বস্তি প্রকাশ করেন অনেক যাত্রী।

কবির হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, শাহবাগ মোড় থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ৮০০ টাকা ভাড়া চাইছে সিএনজিতে। অথচ বাসে করে আমি খুব সহজেই ৫০ টাকা দিয়ে চলে যেতে পারছি। যদিও দীর্ঘসময় বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উচিত আরও বেশি করে বিআরটিসি বাস সড়কে চালু করা, যেন মানুষের ভোগান্তি কিছুটা কম হয়।

এদিকে গণপরিবহনের ভাড়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে বৈঠকে বসেছে বাস মালিকরা। সভায় অংশ নিতে উপস্থিত ভাড়া নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির সদস্য সোহাগ পরিবহন (প্রা:) লিমিটেড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফারুক তালুকদার সোহেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ সভায় ভাড়া পুনর্নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হবে, তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ২০১৩ সালে সর্বশেষ বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল বলে তিনি দাবি করেন।

আরএইচটি/আইএসএইচ