চুরি-ছিনতাই ঠেকাতে রাজধানীতে বাড়ানো হয়েছে পুলিশি টহল

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেছেন, সম্প্রতি ঢাকায় রাতের বেলা বিভিন্ন জায়গায় ছিনতায়ের ঘটনা ঘটছে। এসব ছিনতাই-ডাকাতিসহ বিভিন্ন সম্পত্তি-অর্থনৈতিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনতে গত ১৬ জানুয়ারি থেকে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।

২৩ জানুয়ারি রাতে হাইকোর্ট মাজার সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠের সামনের রাস্তায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন জাসদ নেতা হামিদুল ইসলাম। এ ঘটনায় ডিএমপির গোয়েন্দা রমনা বিভাগের একটি দল সোমবার (২৫ জানুয়ারি) উত্তর মুগদা ও কামরাঙ্গীচর এলাকা অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে।

তারা হলেন- মো. সোহেল ওরফে এরাবিয়ান হোসেন, জাহিদ হোসেন, শুকুর আলী, মো. শাকিল (২) ডুম্বাস ও মো. সোহেল মিয়া। এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি চাকু, একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা, লুণ্ঠিত মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ উদ্ধার করা হয়।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, জাসদ নেতা হামিদুল ইসলাম গত ২৫ বছর ধরে সেগুনবাগিচা হইকোর্ট এলাকায় ক্যাবল নেটওয়ার্কের ব্যবসা করতেন। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে তিনি সেগুনবাগিচা এলাকায় থাকতেন।

গত ২৩ জানুয়ারি হামিদুল পুরান ঢাকা থেকে ফ্ল্যাটের ভাড়ার টাকা নিয়ে সেগুনবাগিচার বাসায় ফেরার পথে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়েছে। ডিবি রমনা বিভাগ এ মামলার ছায়া তদন্তের পর ওই ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশায় করে হাইকোর্টের মাজার গেটের বিপরীত পাশে এসে অবস্থান করে তারা। শাকিল ওরফে ডুম্বাস ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে অপেক্ষায় থাকে। আনুমানিক রাত সাড়ে আটটার দিকে হাইকোর্টের ঈদগাহ মাঠের সামনে ফুটপাতের ওপরে পুরান ঢাকার দিক থেকে আসা হামিদুল ইসলামের গতিরোধ করে ৪ জন। এসময় তার কাছ থেকে একটি স্যামসাং এ-২১-এস মোবাইল সেট ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। এসময় ছিনতাইকারীরা ভিকটিমের পকেটে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে ভিকটিম চিৎকার করে। তখন ছিনতাইকারী সোহেল তার কাছে থাকা চাকু দিয়ে ভিকটিমকে আঘাত করলে মারা যায় হামিদুল ইসলাম।

হাফিজ আক্তার বলেন, ছিনতাইকারীদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে গ্রেপ্তার সবাই পেশাদার ছিনতাইকারী। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ১০টি করে ছিনতাই ডাকাতির মামলা রয়েছে। প্রত্যেকবারই তারা জামিনে বেরিয়ে একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক মো. শাকিলের হাত কাটা। মানবিক কারণে পুলিশ তার ব্যাটারিচালিত রিকশাটি চালাতে বাধা দেয়নি। ঢাবি ক্যাম্পাস এলাকায় সে নির্বিঘ্নে রিকশা চালায়। গ্রেপ্তারের পর জানা যায় তিনি পেশাদার ছিনতাইকারী।

ছিনতাই বাড়ায় কি ঢাকায় টহল-নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে জানতে চাইলে ডিবির এ কর্তকর্তা বলেন, কতোগুলো সামাজিক প্রভাব কাজ করে। যেমন করোনার ক্রান্তিকালে কিন্তু প্রতারণা-ছিনতাইসহ অনেক ধরনের অপরাধই বাড়ে, ঘটতেই থাকে। ঢাকায় দুই কোটি মানুষ। পুলিশের কাজ আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখাসহ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আর অপরাধীদের কাজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লুকিয়ে অপরাধ সংঘঠিত করা।

তিনি বলেন, প্রতি রাতেই যে ছিনতাই হচ্ছে তা নয়, তবে প্রায়শই ঘটছে। সেজন্যই আমরা টহল জোরদার করেছি। আমরা গত সপ্তাহে অনেক ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছি। এবার ছিনতাইসহ খুনের ঘটনায় আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা বিট পুলিশিং বাড়িয়েছি।

ছিনতাইয়ের মামলা বা অভিযোগ থানায় পুলিশ নিতে চায়- এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির এ অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, আমরা থানায় অভিযোগের ভিত্তিতে বলব ছিনতাই বেড়েছে কি-না। সে রকম কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ বলা যাবে না ছিনতাই বেড়েছে। আর থানায় ভুক্তভোগীদের ছিনতাইয়ের মামলা না নিলে ঊর্ধ্বতনদের জানাবেন। পাশাপাশি ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা না করার প্রবণতাও রয়েছে। সেটা না করে থানায় অভিযোগ করতে নগরবাসীকে অনুরোধ জানান তিনি। 

জেইউ/এসএম