যারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, মুক্তিযুদ্ধকে বিশ্বাস করে না, বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্বকে বিশ্বাস করে না তারাই সাম্প্রদায়িক হামলার নেপথ্যে। তারাই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উস্কানি দেয়। সাম্প্রদায়িক হামলায় উস্কে দেওয়া এই শক্তিকে চিহ্নিত করে দ্রুত বিচার করতে হবে।

মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সাংবাদিক ফোরাম আয়োজিত এক সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ৭৫-এর পর সামরিক কায়দায় ক্ষমতায় এসে জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় সংবিধানের দুটি লক্ষ্যবস্তুকে পরিবর্তন করে দিলেন। একটি হলো ধর্মনিরপেক্ষতা, অন্যটি বাঙালি জাতীয়তাবাদ। সেদিন থেকেই অঙ্কুরিত হলো সাম্প্রদায়িক শক্তি। বাঙালি জাতীয়তাবাদ রেখে পাকিস্তানি ভাবধারার বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ উন্মেষ গঠন করা হলো। বীজ বপন করা হলো সাম্প্রদায়িকতা ও পাকিস্তানি ভাবধারার জাতীয়তাবাদের।

তিনি বলেন, এরপর আরেক সেনাশাসক জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম করলেন। যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে বাংলাদেশ স্বাধীন করা হয়েছে, তার ওপর আঘাত করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করা হলো। 

তিনি আরও বলেন, আরেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যারা তাদেরকে গণভবনে ঢোকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। যে পতাকার তারা বিরোধিতা করেছে, বাংলাদেশের সেই পতাকা তাদের গাড়িতে লাগানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক শক্তি, পেশাজীবী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে। এমন কোনো ধর্ম নেই যেখানে সহিংসতা আছে, মানুষ হত্যার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, অন্যের উপাসনালয়ে আঘাত হানার বৈধতা দেওয়া হয়েছে।

সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, (সম্প্রতি সংখ্যালঘুদের ওপর) হামলার পেছনে কারা? রংপুরের গ্রাম কারা জ্বালিয়ে দিল? তাদের ধরতে হবে। আপনি জ্বালিয়ে দেওয়া মন্দির হয়ত ঠিক করে দিতে পারবেন, পুড়িয়ে দেওয়া গ্রাম পুনর্নির্মাণ করা যাবে। আহতদের চিকিৎসা করে সারিয়ে তোলা যাবে। কিন্তু সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীদের মনে যে আঘাত লেগেছে, তা সারিয়ে তুলবেন কীভাবে? তাদের মধ্যে ভয় ও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে তা দূর করবেন কীভাবে? এটা ঘোষণা দিয়ে, বিবৃতি দিয়ে করা যাবে না। অসাম্প্রদায়িক শক্তির বিশাল সমাবেশ তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। বলতে হবে, আপনি সংখ্যালঘু নয়। এই মাতৃভূমিতে আমার যেমন অধিকার আছে আপনারও আছে। তাদের মনোজাগতিক কষ্ট দূর করতে হবে। 

তিনি বলেন, এই দেশে মানববন্ধন হয়, মিছিল হয়, লম্বা লম্বা বিবৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু দুর্বৃত্তদের কোনো শাস্তি দেওয়া হয় না। যদি অপরাধীদের শাস্তির আওতায় না আনা যায়, তাহলে আস্থার সংকট কাটবে না।

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, বিএফইউজের সভাপতি ওমর ফারুক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, সাব-এডিটরস কাউন্সিলের সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল আলম সেতু প্রমুখ। 

এমএইচএন/এইচকে/