সরকার নির্ধারিত নতুন ভাড়ায় গত চার দিন ধরে বাস চলছে। নতুন ভাড়া আদায়ের শুরু থেকেই যাত্রীদের সঙ্গে চালকের সহকারীর বাগবিতণ্ডা চলছে। যাত্রীরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সিএনজিচালিত বাসও নতুন নির্ধারিত ভাড়া আদায় করছে। কিন্তু বাস চালক ও তাদের সহকারীদের ভাষ্য, নির্ধারিত ভাড়াতেই চলছে বাস।

গত কয়েকদিনের ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার চিত্র বলছে, নতুন ভাড়া নির্ধারণের পর যাত্রীদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি বাগবিতণ্ডা হয়েছে বাস ডিজেলচালিত নাকি সিএনজিচালিত এ প্রশ্নে। তাছাড়া নতুন ভাড়ার সঙ্গে ভাঙতি এড়ানোর জন্য যাত্রীদের পকেট কাটার কৌশল নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।

বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর ও শাহবাগ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাসে বাসে যাত্রীদের সঙ্গে চালকের সহকারীদের বাগবিতণ্ডা চলছে। বাস সিএনজিচালিত নাকি ডিজেলচালিত তা উল্লেখ করে স্টিকার এখনও কেন লাগানো হয়নি তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক যাত্রী।

বিকল্প পরিবহনের যাত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের রুজি তো বাড়ে নাই। অন্য সব বাড়ছে। বাসে উঠলেই ১০ টাকা। কত বড় লোকের দেশে আমরা বাস করছি। সরকার যে ভাড়া ঠিক করেছে তার চেয়ে অনেক বেশি নিচ্ছে ওরা। আগে যেখানে ১০ টাকা ভাড়া ছিল সেখানে নিচ্ছে শতকরা ৫০ ভাগ বেশি। যার যা ইচ্ছে তাই করছে, দেখার মতো কেউ নাই।’

আরেক যাত্রী জানান, সরকার আনন্দের সঙ্গে বাস-মালিকের পক্ষে গেল। চার দিন আমাদের ভোগানোর পর যে সিদ্ধান্ত নিলে সেটা কি জনগণের পক্ষে গেল? সব বোঝা জনগণের ওপর দিতে হবে। কোনটা সিএনজি আর কোনটা ডিজেলে চলে সেটাও তো এখনও আমরা জানি না। যে বাসেই উঠি সবাই তো নতুন ভাড়া নিচ্ছে।

সরেজমিনে এসব সড়কে চলাচল করা বাসগুলোর মধ্যে ডিজেলচালিত লেখা স্টিকার খুব কম দেখা গেছে। যদিও মঙ্গলবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) এক জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সিএনজিচালিত বাস ও মিনিবাসে স্টিকার লাগিয়ে দেবে বিআরটিএ।

স্টিকার না থাকা স্বাধীন পরিবহনের চালক ওসমান জানান, তদের কোম্পানির সবগুলো গাড়িতে এখনও স্টিকার লাগানো হয়নি। তবে আজ-কালের মধ্যে হয়ে যাবে। একই সঙ্গে কোন বাসগুলো সিএনজিচালিত সেগুলোতেও স্টিকার লাগিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা।

এদিকে ডিজেল ও সিএনজিচালিত বাসের সংখ্যা নিয়ে তর্ক-বিতর্কের মধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ঢাকা ও দূরপাল্লার বাস-মিনিবাসের ৮০-৯০ শতাংশ সিএনজিচালিত। সিএনজিচালিত বাসে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। কিন্তু ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ১২০টি পরিবহন কোম্পানির মধ্যে মাত্র ১৩ কোম্পানির বাস সিএনজিচালিত। যা সংখ্যায় মাত্র ১৯৬টি। এটি মোট গণপরিবহনের মাত্র ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ।

তিনি আরও জানান, ১০-১২ বছর আগে রাজধানীর বেশিরভাগ গাড়িই গ্যাসচালিত ছিল। এখন এসব বাসের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে ডিজেল ও সিএনজিচালিত বাসে স্টিকার লাগানো হবে। তখন বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়া নিতে হবে। কেউ যাতে অতিরিক্ত ভাড়া নিতে না পারে সেজন্য মালিক-শ্রমিকদের সমন্বয়ে ১১টি ভিজিল্যান্স টিম (পাহারা দল) মাঠে থাকবে।

ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে শুক্রবার সকাল থেকে সারাদেশে বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখে মালিকপক্ষ। রোববার বিকেলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং বাস মালিকদের সভায় দূরপাল্লার বাস ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসে। তারপর সন্ধ্যা থেকে ঢাকার টার্মিনালগুলো থেকে বাস ছাড়তে শুরু করে। ওই রাতে নতুন ভাড়ার হার জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সোমবার থেকেই নতুন ভাড়া কার্যকর হবে।

এনআই/এসএসএইচ