পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, গবেষণা নিয়ে প্রায়ই ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে আমরা যখন আলোচনা করি, যখন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়, তখন তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেন, আমরা তো টাকা দিচ্ছি, এত বেশি ধনী দেশ আমরা নই, তারপরও দুই হাতে টাকা দিচ্ছি, কিন্তু ভালো গবেষণা পাচ্ছি না। এটা প্রধানমন্ত্রীর কথা, আমি শুধু পুনরায় বললাম। মৌলিক গবেষণায় মনোযোগ দিতে হবে। আরও বেশি করে মৌলিক গবেষণা আসা উচিত।

বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি। ‘ব্লু ইকোনমি : সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ শীর্ষক’ গোলটেবিল আলোচনা সভার আয়োজন করে সেভ আওয়ার সি নামে একটি সংগঠন।

মন্ত্রী বলেন, আমার মনে মাঝেমধ্যে প্রশ্ন জাগত সুন্দরবনটা নোয়াখালীতে গিয়ে কেন শেষ হয়ে গেল? কক্সবাজার পর্যন্ত যায়নি কেন? এটা নিয়ে কাউকে জিজ্ঞাসা করিনি। আমি আজকে বলতে চাই, অতীতে ছিল। খেয়ে-খেয়ে এটাকে শেষ করে ফেলা হয়েছে। সেটার জন্য দোষ দিয়ে লাভ নেই, প্রয়োজনেই খেয়েছে। এখনও আমরা সুন্দরবনকে খাচ্ছি। বেঁচে থাকার জন্যই খাচ্ছি। আমরা তো মায়ের দুধ খেয়ে বাঁচি। কিন্তু মায়ের দুধ যেমন খেতে হবে, তেমনি মাকেও সুরক্ষা দিতে হবে। সুরক্ষার কাজটা আমরা অনেকে হয়ত করি না। এই অবহেলার কারণে এতো বড় সুন্দরবন খেয়ে ফেলেছি।  

তিনি বলেন, আমরা অসচেতন ছিলাম হাজার বছর। আমাদের সচেতনতার বয়স মাত্র ৫০ বছর। তাও অতি সম্প্রতি আমাদের অর্থনীতি ও সামাজিক জীবন নিয়ে আলোচনা চলছে। আর আপনারা প্রাকৃতিক জগতে যে স্থায়িত্ব চাচ্ছেন তার জন্য সামাজিকভাবে কিছু স্থায়িত্ব প্রয়োজন আছে এখনও আমাদের। সেটা কী ধরনের? তা হচ্ছে আধুনিক মনোভাব, বিজ্ঞানমনস্ক মনোভাব।

সুন্দরবন সম্পর্কে কয়জন বাঙালি জানেন? এমন প্রশ্ন রেখে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, শিক্ষকরা জানেন, দুই-চারজন সাংবাদিক আছেন তারা কিছু জানেন। বঙ্গোপসাগর সম্পর্কে আমরা কতজন জানি? অথচ আমাদের নিজস্ব একটি সাগর। এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদ। শুধু সুন্দরবন রক্ষা নয়, সবকিছুই রক্ষা করতে হবে।

নতুন করে কোনো মন্ত্রণালয়ের দরকার নেই উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, নতুন কোনো মন্ত্রণালয়ের দরকার আছে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না। তবে সবাইকে কাজ করতে হবে। বিজ্ঞানী নিউটনদের আমলে কী ছিল সুযোগ-সুবিধা? কিন্তু তারা কতকিছু আবিষ্কার করে গেছেন। আমাদের সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। বিশেষ করে গবেষণায়।

এম এ মান্নান বলেন, সাগর নিয়ে আলাদা মন্ত্রণালয় করলেই সব সমস্যার সমাধান হবে না। দরকার কাজ করা। বিশেষ করে গবেষণা বাড়ানো গেলে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগর থেকে অনেক সম্পদ অর্জনে সক্ষম হবে।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ আনোয়ারুল হকের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সন্তুস কুমার দেব, ওশেনোগ্রাফি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. একেএম আজম চৌধুরী। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশেনোগ্রাফি ডিপার্টমেন্টের সভাপতি ড. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দীন মুন্না। 

এএইচআর/এসকেডি