অর্ধ ডজন জাহাজের মালিক ‘পাপড়ী’কে দুদকে তলব
অর্ধ-ডজন জাহাজের মালিক বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তার স্ত্রী ইসরাত জাহান পাপড়ীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো নোটিশে তাকে আগামী ১৬ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১টায় হাজির হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) দুদকের জনসংযোগ দফতর সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বিজ্ঞাপন
দুদক উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান স্বাক্ষরিত তলবি নোটিশ পাপড়ীর মালিকানাধীন বে ওয়াটার সার্ভিসের মতিঝিল অফিস ও সিদ্ধেশ্বরীর ২/ডি ফ্ল্যাটে গত ৮ নভেম্বর পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়া বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক আবু বকর ছিদ্দিকের স্ত্রীর নামে ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা মূল্যের অর্ধডজন যাত্রীবাহী কিংবা মালবাহী জাহাজ রয়েছে। যা নৌ-পরিবহন অধিদফতর থেকে রেজিস্ট্রেশন নথিতে তালিকাভুক্ত রয়েছে। শুধু স্ত্রীর নামে নয়, বেনামে আরও বেশ কয়েকটি জাহাজ রয়েছে তার। সবমিলিয়ে ওই কর্মকর্তার দখলে রয়েছে এক ডজনের বেশি জাহাজের মালিকানা।
বিজ্ঞাপন
আবু বকর ছিদ্দিকের স্ত্রী ইসরাত জাহান পাপড়ীর নামে ছয়টি জাহাজের মালিকানা রয়েছে। জাহাজগুলো হলো : এমভি আল জামিউ-৩, এমভি রাজহংস-৭, এমভি রাজহংস-৮, এমভি রাজহংস-১০, এমভি বন্ধন-৫ ও এমভি শাহরুখ-১। এর মধ্যে দুটি জাহাজ একক মালিকানায় আর চারটি যৌথ মালিকানায়। যার নথিপত্র এখন দুদকের হাতে রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে আবু বকর সিদ্দিকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে রং নম্বর বলে লাইন কেটে দেন।
ইসরাত জাহানের নামে জাহাজগুলো হলো :
এমভি আল জামিউ-৩ : মেসার্স আল জামিউ শিপিং লাইন্সের অধীন এটি একটি মালবাহী জাহাজ। যেটির রেজিস্ট্রেশন হয় ২০১২ সালের অক্টোবরে। মালিক হলেন- মো. মোক্তার হোসেন ভূঁইয়া, আবু বকর সিদ্দিকের স্ত্রী ইসরাত জাহান পাপড়ী, মো. আবদুর রশিদ ও মো. এখলাসুর রহমান রফিক।
এমভি রাজহংস-৭ : ৬৭৮ টনের এমভি রাজহংস-৭। ২০২০ সালের ১০ মে মেসার্স বে ওয়াটার সার্ভিস কোম্পানির (প্রতিষ্ঠান) আওতায় এটির রেজিস্ট্রেশন হয়। এর একক মালিকানায় রয়েছেন ইসরাত জাহান পাপড়ী।
এমভি রাজহংস-৮ : ১১৭৫ টনের এমভি রাজহংস-৮। মেসার্স বে-ওয়াটার ওয়েজ কোম্পানির নামে রেজিস্ট্রেশন হয়। যার মালিক হচ্ছেন- ইসরাত জাহান পাপড়ী ও অহিদুজ্জামান খোকা।
এমভি রাজহংস-১০ : ১৪৯৮ টনের এমভি রাজহংস ১০ বে-ওয়াটার সার্ভিস কোম্পানির নামে নিবন্ধিত। যার মালিকানাও ইসরাত জাহান পাপড়ীর একক নামে। ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল এর রেজিস্ট্রেশন হয়।
এমভি বন্ধন-৫ : ১২৬৯ টনের এমভি বন্ধন-৫ মেসার্স বন্ধন ওয়াটার ওয়েজ কোম্পানির নামে রেজিস্ট্রেশন হয় ২০১৬ সালের এপ্রিলে। যার মালিকানায় আছেন ইসরাত জাহান পাপড়ী ও মো. টিটু মিয়া। জাহাজটি ২০১৬ সালে নির্মিত হয়। মেসার্স সুন্দরবন শিপিং বিল্ডার্স এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।
এমভি শাহরুখ-১ : ১৩৮৫ টনের এমভি শাহরুখ-১ মেসার্স শাহরুখ এন্টারপ্রাইজ কোম্পানির নামে রেজিস্ট্রেশন করা। ২০১৭ সালের ১২ জানুয়ারি রেজিস্ট্রেশন হওয়া বহুতল জাহাজটির মালিকানায় আছেন পাঁচজন। তারা হলেন- মো. লুৎফর রহমান রুমি, মো. রফিক, মো. ওয়াহীদ, ইসরাত জাহান পাপড়ী ও নেয়ামত উল্লাহ।
দুদকে দাখিল হওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিআইডব্লিউটিএর সাবেক উপপরিচালক আবু বকর সিদ্দিক নামে-বেনামে ১৫টির বেশি জাহাজের মালিক। এসব অভিযোগের দায় নিয়ে ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর স্বেচ্ছায় অবসরে যান তিনি। অধিকাংশ জাহাজের মালিকানাসংক্রান্ত কাগজপত্র তিনি স্ত্রী ইসরাত জাহান পাপড়ীর নামে করেন। তার মালিকানাধীন জাহাজগুলোর মধ্যে রাজহংস-১০ এর যাত্রী ধারণক্ষমতা ৬১৬ জন। ১৫ কোটি টাকা মূল্যের জাহাজটি ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল রেজিস্ট্রেশন পায়।
অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, স্ত্রী ইসরাত জাহান পাপড়ীকে জাহাজের মালিক দেখিয়ে দুটি কোম্পানি খোলেন আবু বকর সিদ্দিক। একটি হচ্ছে মেসার্স বে-ওয়াটার সার্ভিস লিমিটেড, অপরটি মেসার্স বন্ধন ওয়াটার ওয়েজ। যাত্রীবাহী জাহাজের পাশাপাশি বেনামে শিপিং লাইন্সের (কার্গো জাহাজ) ব্যবসাও আছে তার। আল জামিউ শিপিং লাইন্স লিমিটেডের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত প্রটোকল রুটে পণ্য পরিবহন করে তার প্রতিষ্ঠান।
আরএম/এসকেডি