প্রতীকী ছবি

সম্প্রতি যুক্তরাজ্য থেকে সিলেটে আসা ২৮ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়ার পর দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে সতর্কতা আরও বাড়ানো হয়েছে। যুক্তরাজ্য থেকে আগত যাত্রীদের স্বাস্থ্য বিষয়ক কাগজপত্রগুলো অতিরিক্ত সময় নিয়ে যাচাই-বাছাই করছে বিমানবন্দরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

দেশকে করোনামুক্ত করতে বিমানবন্দরে যাত্রীদের সহযোগিতা দরকার। তবে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন এড়াতে অনেকেই বিমানবন্দরে অসত্য তথ্য দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট। মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) বিকেলে ‘ম্যাজিস্ট্রেট অল এয়ারপোর্ট অব বাংলাদেশ’ নামক ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়। এ ফেসবুক পেজটি বিমানবন্দরে দায়িত্বরত তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট পরিচালনা করেন।

পোস্টে তাদের একজন ম্যাজিস্ট্রেট (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) লিখেছেন, ‘বিদেশ থেকে আগত সব যাত্রীকেই ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার আগে বাধ্যতামূলকভাবে হেলথ ডিক্লারেশন ফরম পূরণ করতে হয়। লক্ষ্য করা গেছে যে, ইউকে থেকে আগত কিছু যাত্রী হেলথ ডিক্লারেশন ফরমের Port of Embarkation/Entry (যে দেশ থেকে যাত্রা শুরু করেছেন) এবং Countries visited within last 2 weeks (গত দুই সপ্তাহে যে সমস্ত দেশ ভ্রমণ করেছেন) ঘর দুটি পূরণ করছেন না অথবা সেখানে অসত্য তথ্য দিচ্ছেন। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন এড়ানোর বদ উদ্দেশ্যে এভাবে তথ্য গোপন করা বা অসত্য তথ্য দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। ইউকে থেকে আগত সব যাত্রীকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।’

এবিষয়ে পোস্টদাতা ম্যাজিস্ট্রেট (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) ঢাকা পোস্টকে বলেন, যুক্তরাজ্য থেকে আগত যাত্রীরা কোভিড টেস্টের নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে আসার পরেও তাদেরকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে প্রেরণ করা হয়ে থাকে। কোয়ারেন্টাইন শেষে তাদের আবারও পিসিআর টেস্ট করা হয়। সিলেটে কোয়ারেন্টাইন শেষ করা ইউকে ফেরত যাত্রীদের পিসিআর টেস্ট করানোর পর তাদের অনেকে করোনা পজিটিভ হয়েছেন।

তিনি বলেন, তারা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে না গিয়ে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পেলে এতক্ষণে বাড়ির বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিসহ অনেককেই হয়তো করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্টে আক্রান্ত করে ফেলতেন। কেউ যদি অসত্য তথ্য দেন তাহলে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনসহ আর্থিক জরিমানার শাস্তি দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত ২১ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিমানের এক ফ্লাইটে সিলেট আসা ১৫৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৮ জনের করোনাভাইরাস পজেটিভ এসেছে। তাদের খাদিমপাড়া ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যে পাওয়া করোনার নতুন ধরনের সংক্রমণ বৃদ্ধির পর চলতি মাস থেকে যুক্তরাজ্য ফেরত ব্যক্তিদের নিজ খরচে হোটেলে ৭ দিন বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। এ নির্দেশনার পর ৪ জানুয়ারি থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচটি ফ্লাইটে ৪০০ জন যাত্রী যুক্তরাজ্য থেকে সিলেটে আসেন।

এসব যাত্রীদের স্ব-খরচে থাকার জন্য সিলেটে বেশ কয়েকটি হোটেল নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন পালন করেছেন ৪১ জন। নতুন নিয়মে কোয়ারেন্টিন শেষে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৭২ জন বাড়ি ফিরেছেন।

১৩ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যুক্তরাজ্য ফেরত ব্যক্তিদের জন্য নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের সময়কাল কমিয়ে চার দিন ও করোনা পরীক্ষার পর নেগেটিভ ফল এলে বাড়ি ফিরে আরও ১০ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর পরীক্ষায় পজিটিভ ফল এলে তাদের সরকার নির্ধারিত আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তির নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এআর/ওএফ