অধিকাংশ মানুষই অবৈতনিক পরিচর্যার বিষয়ে অবগত নয়
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান/ ফাইল ছবি
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, দেশের জনসংখ্যার বড় একটি অংশ অবৈতনিক পরিচর্যা কাজের স্বীকৃতি সম্পর্কে অবগত নয়। এ সমস্যা সমাধানে কৌশলগতভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার।
শনিবার (২০ নভেম্বর) সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘নীতিনির্ধারণে কেয়ার ইকোনমির অন্তর্ভুক্তি’ শীর্ষক ওয়েবিনার প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এখন ইতিবাচক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে বাধ্যতামূলক তিনজন নারী সদস্য বা উপজেলা পর্যায়ে একজন নারী ভাইস চেয়ারম্যান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরির ৬০ শতাংশ নারীদের জন্য সংরক্ষিত ইত্যাদি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। উপযুক্ত আইন ও বিধিবিধানের মাধ্যমে পরিচর্যা খাতের স্বীকৃতি ও নারীদের মূলধারার শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আর্থ-সামাজিক নানা সূচকে বাংলাদেশ অনেক সাফল্য অর্জন করেছে। তবে নারীর শ্রমের বেশিরভাগ অংশই অপ্রদর্শিত। দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করতে নারীর অপ্রদর্শিত শ্রমকে নীতিনির্ধারণের মাধ্যমে স্বীকৃতি দেওয়া ও শ্রমের পুনর্বণ্টন করা প্রয়োজন।
বিজ্ঞাপন
ওয়েবিনায়ারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সানেমের গবেষণা পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা।
তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে নারীরা গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি পারিবারিক অর্থনৈতিক কাজে অংশগ্রহণ করছেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে তারা কোনো বেতন না পাওয়ায় কাজের স্বীকৃতি পাচ্ছেন না। সন্তানদের বা বয়স্কদের দেখাশোনার অবৈতনিক কাজে ৮১.৪ শতাংশ ক্ষেত্রে বাড়ির নারীরাই যুক্ত থাকেন। ফলে তারা মূলধারার শ্রমবাজারে নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারছেন না।
তিনি আরও বলেন, দেশের ১৫-২৯ বছর বয়সী নারীরা গড়ে দৈনিক ৬ ঘণ্টা এ অবৈতনিক পরিচর্যায় নিয়োজিত থাকেন। প্রতি ঘণ্টা অবৈতনিক পরিচর্যায় সময় দেওয়ায় তার শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের হারকে ১.৮ শতাংশ কমিয়ে দেয়। ৫ বছরের কম সন্তান থাকা নারীদের ক্ষেত্রে যা ২.৪ শতাংশ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এখনো কর্মজীবী নারীর সন্তানদের দেখভাল করার জন্য দিবা-যত্ন কেন্দ্রের পর্যাপ্ততা উল্লেখযোগ্য নয়। প্রাতিষ্ঠানিক দিবা-যত্ন কেন্দ্রের মান ও পর্যাপ্ততা নিশ্চিতের মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব। যার ফলে নারীরাও মূলধারার শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাবেন।
এ সময় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের যুগ্ম সচিব বেবী রানী কর্মকার বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে নারীর শ্রমকে স্বীকৃতি ও অন্তর্ভুক্তির কোনো বিকল্প নেই। অপ্রদর্শিত শ্রমের ভার কমানোর মাধ্যমে নারীর মূলধারার অর্থনৈতিক কাজে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা সম্ভব।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, যে নারীরা মূলধারার শ্রমবাজারে কাজ করছেন তাদের আয়ের সঙ্গে যদি গৃহস্থালির করা কাজগুলো একীভূত করে হিসাব করা হয়, তাহলে তাদের আয় আড়াই থেকে তিনগুণ বেড়ে যেতে পারে। কাজেই নারীর অবৈতনিক কাজকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা জরুরি।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হানের সঞ্চালনায় ওয়েবনিয়ারে অন্যান্যদের মধ্যে আরও যুক্ত ছিলেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম, মহিলা অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক শেখ মুসলিমা মুন।
এসআর/এসকেডি