বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরাের (বিবিএস) জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পে ট্যাব ক্রয়ের নামে ৫৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ঠেকাতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরাের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এরকম একটি চিঠি ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে।

অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, 'জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২১ প্রকল্প বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরাের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। যার মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশের জনসংখ্যা গণনা করা হয় এবং তথ্য পরিকল্পনার কাজে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি ব্যর্থ করে এবং সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার লক্ষ্যে কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা নিজেদের হরিলুটের জন্য ট্যাব কেনার আয়ােজন করছে, যা থেকে ৫৫০ কোটি আত্মসাৎ করার পাঁয়তারা।'

জনশুমারি গৃহগণনায় কেন ট্যাবলেট ক্রয়ের প্রয়ােজন নেই তার কারণগুলোও চিঠিতে উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। কারণগুলো হলো-

১। ট্যাবলেট দিয়ে সারাদেশ একযােগে শুমারি করা সম্ভব না : ট্যাবলেট CAPI (Computer Assisted personal interview) পদ্ধতিতে ছােট জরিপ করা গেলেও সারাদেশে একযােগে শুমারি করা সম্ভব নয়। এর আগে বিবিএস এর ন্যাশনাল হাউজহােল্ড ডাটাবেজ (এনএইচডি)) প্রকল্পের তথ্য সংগ্রহের জন্য CAPI এর পাইলট করা হলেও বাস্তব সম্মত না হওয়ায় তা বাদ দেওয়া হয়। তাছাড়া ট্যাবলেট ক্রয়ের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশােধন করা হয়। কিন্তু সংশােধিত ডিপিপি একনেক থেকে অনুমােদন নেওয়া হয়নি।

২। কোনো পাইলট কার্যক্রম করা হয়নি : সারাদেশে CAPI পদ্ধতিতে শুমারি করতে হলে বিস্তৃত পর্যায়ে পাইলট কর্যক্রম সম্পন্ন করা প্রয়ােজন, যা এ প্রকল্পের ক্ষেত্রে করা হয়নি। পাইলট সফল হলেই এধরনের ক্রয়ে কার্যক্রম সম্পন্ন করা যেতে পারে। না হলে শুমারি
ব্যর্থ হবে এবং এ ক্রয়ের ৫৫৮ কোটি টাকা অপচয় হবে। পৃথিবীর কোনো দেশে আজ পর্যন্ত CAPI ব্যবহারের মাধ্যমে শুমারির তথ্য সংগ্রহ করা হয়নি।

৩। আইসিআর (Intelligent Character Recognition) প্রশ্নপত্রে তথ্য সংগ্রহ ব্যয় খুব কম। শুমারির প্রশ্নপত্র মুদ্রণ ছাড়া তথ্য ধারণ এবং প্রক্রিয়াকরণের জন্য ইতোমধ্যে ৫টি অত্যাধুনিক স্ক্যানার ও ৫০০টি ডেস্কটপ কম্পিউটারসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ও দ্রব্যাদি
ক্রয় করা হয়েছে। আইসিআর প্রশ্নপত্র মুদ্রণের জন্য ৭/৮ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। সেখানে ট্যাবের মাধ্যমে ৫৫৮ কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে যা জনগণের ট্যাক্সের টাকার অপচয়।

৪। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরাে সৃষ্টি হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৫টি আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ৫টি শুমারিতে তথ্য ধারণ এবং প্রক্রিয়া করার জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ওএমআর, ওসিআর, আইসিআর ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু আসন্ন জনশুমারি ও গৃহগণনা
প্রকল্পে উক্ত প্রযুক্তি বাদ দিয়ে ট্যাব ক্রয়ের জন্য প্রস্তাব ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রেরণ করা হয়েছে। যা যুক্তিসঙ্গত নয়।

৫। দাখিল করা প্রস্তাবে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান Samsung-কে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য উদ্দেশ্য প্রণােদিতভাবে স্যামসাংয়ের স্পেসিফিকেশন ব্যবহার করা হয়েছে। স্পেসিফিকেশনে এসব সদস্যের স্বাক্ষরবিহীন প্রস্তাব ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হয়েছে যা বিধিবহির্ভূত। সরকারি অর্থ আত্মসাৎ এবং অপচয় করার জন্য ট্যাব ক্রয়ের পাঁয়তারা করা হচ্ছে, যা প্রকারান্তে শুমারি ব্যর্থ করার অপচেষ্টা মাত্র।

অতএব বিনীত আবেদন, এই জাল ও ত্রুটিপূর্ণ দরপত্রের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের ৫৫০ কোটি টাকা হরিলুটের আয়ােজন বন্ধসহ সরকারি অর্থের অপচয় বন্ধের জন্য ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বিনীত হস্তক্ষেপ কামনা করছি, বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এসআর/জেডএস