বহুদিন পর অন্যরকম সকাল কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে
করোনার টিকা নিয়ে খুশি হাসপাতালের সবাই। ফুল জানাচ্ছেন সহকর্মীরাই
কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল। গত এক বছর ধরে রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত এই হাসপাতালটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিন শুরু হতো করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিয়ে। মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত লাখ লাখ মানুষ চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন হাসপাতালটি থেকে। অ্যাম্বুলেন্সের আতঙ্কিত সাইরেন, আইসিইউর সংকেত, রোগীর আত্মচিৎকার ও মৃতের স্বজনদের কান্না আহাজারির শব্দেই দিন পার হতো ডাক্তার নার্সদের।
তবে ব্যতিক্রম আজকের দিনটি। হাসপাতালটির প্রাঙ্গণে বইছে আনন্দ আর হাসির জোয়ার। কারণ, দেশে টিকা এসেছে। বুধবার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করার পর এর প্রয়োগ শুরু হয়ে গেছে। আজকে টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালেও। তাই খুশি হাসপাতালটির চিকিৎসক, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কর্মীরা। এবার বুঝি করোনা জয়ের পালা শুরু। দিনের শুরুতে এমন আনন্দ অনেকদিন পর দেখা গেল।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার সকালে (২৮ জানুয়ারি) কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসকসহ বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের কর্মীরা খুশি মনে নভেল করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা নিচ্ছেন।
টিকা নেওয়ার পর ফুল দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছেন তাদেরই সহকর্মীরা। করতালি দিয়ে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি দেওয়া হচ্ছে একটি করে চকলেট। টিকা নেওয়ার পর চেহারায় কোনো দুশ্চিন্তা বা ভয় দেখা যায়নি। বরং খুশি দ্রুত এই মরণঘাতির প্রতিষেধক নিতে পেরে।
বিজ্ঞাপন
কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিঞা ঢাকা পোস্টকে বলেন, খুব ভালো লাগছে সহকর্মীদের টিকা নেওয়া দেখে। তারা নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন করোনার রোগীদের সামাল দিতে। এদের মধ্যে অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন। আজ তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতিষেধক হিসেবে টিকা দেওয়া হলো।
তিনি আরও বলেন, আজ মোট ৫০ জনকে টিকা দেওয়ার কথা থাকলেও প্রায় ৫৫ জনকে টিকা নিয়েছেন। টিকা নেওয়ার পর আমরা তাদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করেছি। কেউ যদি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পরেন, তাহলে তাকে দ্রুত চিকিৎসা সেবা দিতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে প্রায় বেলা ১টা পর্যন্ত টিকা দেওয়ার কার্যক্রম চলেছে।
আপনি কবে টিকা নিচ্ছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রশাসনিক কাজ সামলাতে গিয়ে আমার রোগীর কাছে খুব বেশি যাওয়ার সুযোগ মিলে না। কিন্তু চিকিৎসক, স্টাফদের প্রতিনিয়ত যেতে হয়। তাই উনাদের আগে টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে সবাইকে সাহস দিতে আমাদের হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক টিকা নিয়েছেন।
বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রি হাসপাতাল ছাড়াও রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল এবং নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের টিকা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে দেওয়া হচ্ছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা। আট সপ্তাহের ব্যবধানে এ টিকার দুটি ডোজ নিতে হবে। বাংলাদেশে যেহেতু এ টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়নি, তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী প্রথম দফায় ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যক্তির উপর এ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে তাদের পর্যবেক্ষণ করা হবে।
একে/এমএইচএস