চলচ্চিত্রে ধূমপানের দৃশ্য তরুণদের প্রভাবিত করছে
চলচ্চিত্রে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন ও করণীয় শীর্ষক সভায় অতিথিরা/ ছবি: সংগৃহীত
জনস্বার্থে দেশে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ আইনের ধারা-৫ (ঙ) অনুযায়ী- সিনেমা, নাটক, প্রামাণ্যচিত্রে ধূমপান/তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য প্রদর্শন না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কাহিনীর প্রয়োজনে অত্যাবশ্যক হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এ আইনটি না মেনেই নাটক, সিনেমায় ধূমপানের চিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে। যা আইন লঙ্ঘনের পাশাপাশি মানুষকে ধূমপানে উৎসাহিত করছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের সভা কক্ষে আয়োজিত ‘চলচ্চিত্রে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন ও করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সভাটি যৌথভাবে আয়োজন করে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড, বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দি ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক অ্যাড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম।
বিজ্ঞাপন
প্রবন্ধে তিনি বলেন, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আগামী প্রজন্ম যেন তামাকজাতদ্রব্য গ্রহণে আসক্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি। নায়ক নায়িকা ধূমপানের দৃশ্য তরুণদের প্রভাবিত করে। ৫০টি সিনেমা গবেষণা করে দেখা গেছে, চলচ্চিত্রে ধূমপানের দৃশ্য ব্যবহারের হার উদ্বেগজনক। অনেক সময় তামাক কোম্পানির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় চলচ্চিত্রে অপ্রয়োজনে মাত্রারিক্ত ধূমপানের দৃশ্য দেখানো হচ্ছে। কিছু কিছুক্ষেত্রে ব্রান্ডের নামও দেখানো হচ্ছে। চলচ্চিত্রের প্রয়োজনে যদি ধূমপানের দৃশ্য দেখানো হয় তবে তা অবশ্যই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে মেনে দেখানো প্রয়োজন।
সভায় চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স. ম. গোলাম কিবরিয়া বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ অনেক এগিয়েছে। আমাদের নির্মাতারা চলচ্চিত্র নির্মাণে তামাকের ব্যবহারের বিষয়টি ভবিষ্যতে লক্ষ্য রাখবেন। কারণ চলচ্চিত্র একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম। আমরা চাই, চলচ্চিত্র তামাক নিয়ন্ত্রণে সহায়ক মাধ্যম হবে। শুধু সিনেমা নয়, নাটক, ওয়েব সিরিজসহ অন্য মাধ্যমগুলোতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বাস্তবায়ন জরুরি। গল্পের প্রয়োজনে সিনেমাতে ধূমপানের দৃশ্য দেখানোর প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে আইনের অনুসরণ করা আমাদের দায়িত্ব।
বিজ্ঞাপন
সভায় অন্যান্যরা বলেন, সেন্সর বোর্ড প্রাপ্ত সিনেমার কপিগুলো দেখে যথাযথভাবে অনুমোদন দেয়। অনেক সময় অনুমোদন ছাড়াও কিছু কিছু পোস্টার তৈরি করা হয়। সেখানে নানা ধরনের সমস্যা থাকে। তবে অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমাদের মাঝে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের নিয়ে একসঙ্গে কাজ করা জরুরি। তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য ছাড়াও অনেক ব্যবসা সফল ছবি আমাদের দেশে রয়েছে। ধূমপানের দৃশ্য না থাকলে ছবি সফল হবে না এ ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নিজেদের সৃষ্টিশীলতার বিকাশ ঘটাতে হবে। তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর এবং সেন্সরবোর্ডসহ সকলের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসীম উদ্দিন, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ, প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সচিব মো. মমিনুল হক জীবন, চলচ্চিত্র পরিচালক সাফি উদ্দিন সাফি, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও প্রকাশনা) মোহাম্মদ আলী সরকার, ভাইটাল স্ট্রাটেজিস-বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার নাসির উদ্দিন শেখ প্রমুখ।
এমএইচএন/এফআর