‘আমি কিছু চাই না। তোমরা আমার শাহীনকে ফিরিয়ে দাও।’ শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে চিৎকার করে কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামে রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় নিহত এইচএসসি পরীক্ষার্থী সাতরাজ উদ্দিন শাহীনের বাবা মো. করিম। 

‘দুই ছেলের মধ্যে শাহীন সবার বড়। সে অনেক মেধাবী ছিল। আজ কলেজে কাজ আছে বলে বাসা থেকে বের হয়। আমার ছেলে আর ফিরল না।’ এ কথা বলেই মো. করিম কান্নায় ভেঙে পড়েন।

বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের জাকির হোসেন সড়কের ঝাউতলা এলাকার রেল ক্রসিংয়ে বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও টেম্পোর সঙ্গে ডেমু ট্রেনের সংঘর্ষ ঘটে। এতে পুলিশ সদস্যসহ তিনজনের মৃত্যু হয়। তাদেরই একজন পাহাড়তলী ডিগ্রি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার্থী শাহীন। একটি পরীক্ষাও দিয়েছিল সে।

হাসপাতালের মর্গের সামনে শাহীনের বাবার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন মামা মো. ইউসুফ। তিনি বলেন, বোনজামাই একটি দোকানে চাকরি করেন। কষ্ট করে ছেলেকে পড়ালেখা করাচ্ছিলেন। শাহীনের ছোট আরেকটি ভাই আছে। সবার স্বপ্ন ছিল, শাহীন বড় হয়ে পরিবারের হাল ধরবে। কিন্তু কী থেকে কী হয়ে গেল!

তিনি বলেন, রেলক্রসিংয়ের গেটবারটি ফেলা থাকলে আজকে এ দুর্ঘটনা ঘটত না। অতীতেও এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কোনো কিছুই হয়নি। শান্ত একটি মেধাবী ছাত্র অকালে ঝরে যাবে, মানতে পারছি না। গরীবের ছেলেরা মরে বলে কোনো অ্যাকশন হচ্ছে না। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। এ ধরনের গাফিলতি কেন বার বার হয়।

মর্গের সামনে সামনে দাঁড়িয়ে শাহীনের বাবাসহ স্বজনরা 

তিনি আরও বলেন, গেটম্যানের গাফিলতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ ঘটনার বিচার চাই। আজ আমাদের শাহীন মারা গেছে। ভবিষ্যতে যেন আর কোনো শাহীন এভাবে মারা না যায়।

দুর্ঘটনায় নিহত শাহীন পরিবারের সঙ্গে চট্টগ্রাম নগরীর হামজারবাগ এলাকায় থাকত। বন্ধুরা জানায়, সে মেধাবী ছাত্র ছিল। জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঝাউতলার ওই রেললাইনের ওপর দিয়ে ঢাকাগামী দূরপাল্লার বাসসহ নগরের ভেতরের বিভিন্ন পরিবহন চলাচল করে। শনিবার বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রামের নাজিরহাট থেকে চট্টগ্রাম স্টেশনগামী ডেমু ট্রেনের সঙ্গে বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও টেম্পোর সংঘর্ষ ঘটে। 

খুলশী থানার ওসি শাহিনুজ্জামান বলেন, রেলক্রসিংয়ের গেটবারটি লাগানো হয়নি। এতে সিএনজিচালিত  অটোরিকশা ও টেম্পো কিছুটা সামনে চলে আসে। এরমধ্যেই পেছন থেকে একটি বাস গাড়ি দুটিকে কিছুটা ধাক্কা দিয়ে আরও সামনে রেললাইনের ওপরে নিয়ে যায়। এমন সময় ট্রেন চলে আসে। ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। টেম্পো ও বাসেও ধাক্কা লাগে।

এ ঘটনায় শাহীন ছাড়াও মারা গেছেন ট্রাফিক উত্তর বিভাগে কর্মরত কনস্টেবল মনির উদ্দিন ও সিএনজিযাত্রী সৈয়দ বাহাউদ্দিন আহমেদ। মনির উদ্দীন রেললাইনের ওপর থেকে গাড়িগুলো সরানোর চেষ্টা করছিলেন। রেলক্রসিংয়ের গেটম্যান আলমগীর ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন। ঘটনা তদন্তে রেল ও রেলওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কেএম/আরএইচ/জেএস