শেরপুরসহ দেশজুড়ে একের পর এক হাতিসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী হত্যার পিছনে বনভূমিতে অবৈধ দখলদারদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোটের (বিএনসিএ) ছায়া তদন্তে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

দুই দিনব্যাপী তদন্ত কার্যক্রম শেষে আজ শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) সংগঠনটির ছায়া তদন্ত কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, শেরপুরসহ দেশজুড়ে একের পর এক হাতিসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী হত্যার ঘটনার কারণ উদঘাটনে ছায়া তদন্ত করছে বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট। তদন্তের অংশ হিসেবে শেরপুরে হাতি হত্যার ঘটনাস্থলসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর ঘুরেছেন জোটের প্রতিনিধিরা। তারা বৈঠক করেছেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়দের সঙ্গে।

এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোটের আহ্বায়ক ও ছায়া তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার সাংবাদিকদের জানান, শেরপুরের আগে কক্সবাজারেও ছায়া তদন্ত করেছেন তারা। দুইটি জেলার তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যসহ যাবতীয় তথ্য যাচাই শেষে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করবে বিএনসিএ।

ছায়া তদন্তে প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট সব মহলের সংগে কথা বলার চেষ্টা করেছি। প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত তথ্য হিসেবে বলতে পারি, বন, বনভূমি ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় বন বিভাগ ক্রমাগতভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। বনের জায়গায় অবৈধ দখলই হাতিসহ বন্যপ্রাণীদের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের যাচাই-বাছাইয়ে হাতি হত্যায় বনে অবৈধ বসবাসকারীদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে।

‘আর এই কাজে সহযোগিতার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের দায় কোনো অংশে কম ছিল না। তারা বনের জমিতে অবৈধ দখলদারদের বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে সুস্পষ্টভাবে আইন লঙ্ঘন করেছে। এত আলোচনা-সমালোচনার পরও তারা সংরক্ষিত বন থেকে বিদ্যুৎ লাইন সরায়নি। ফলে এসব ঘটনার দায় তারা কোনোভাবে এড়াতে পারে না’, যোগ করেন ছায়া তদন্ত কমিটির প্রধান।

তিনি আরও বলেন, বন বিভাগ হাতি নিয়ন্ত্রণে প্রকল্পের মাধ্যমে সোলার ফেন্সিং পদ্ধতি সংযুক্ত করেছিল, এখন সেটির কোনো কার্যকারিতা নেই। তারা বরাবরই প্রকল্পের মাধ্যমে বন-বন্যপ্রাণী রক্ষার চেষ্টা করে, প্রকল্প শেষ হলে বনও অনিরাপদ হয়ে পড়ে। এখানেও তেমনই ঘটেছে। বনে হাতির খাবার কমার কারণেও সংঘাত বেড়েছে। তাছাড়া জনসচেতনতার নামে নানান প্রকল্পের টাকা খরচ করা জনগণের মধ্যে বন্যপ্রাণী রক্ষা সংক্রান্ত তেমন সচেতনতা দেখা যায়নি।

সর্বোপরি বনের জায়গায় সাধারণ মানুষের বসবাসই বন উজাড় এবং বন্যপ্রাণীর জন্য সবচেয়ে বেশি হুমকির কারণ হয়েছে বলেও জানান ছায়া তদন্ত কমিটির প্রধান।

বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় কয়েকটি পরামর্শও তুলে ধরেন বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোটের আহ্বায়ক। সেগুলো হলে- হাতি হত্যার ঘটনাগুলোর  বিচারবিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থা করা; হাতি হত্যায় জড়িতদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা; অবৈধ দখলদারদের খাস জমিতে পুনর্বাসন; প্রকল্পের মাধ্যমে নয়, বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য নিয়মিত বাজেট রেখে বন বিভাগের মূল দায়িত্ব হিসেবে নির্ধারণ করতে হবে; বনে অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করতে হবে; বন বিভাগের পর্যাপ্ত জনবল দেওয়া এবং এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমতে আর্থিক সুবিধা বাড়াতে হবে; বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় গণমাধ্যমকে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে।

এর আগে শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) জোট প্রধান পরিবেশবিজ্ঞানী ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদারের নেতৃত্বে ঢাকা থেকে আসেন ৬ সদস্যের ছায়া তদন্ত দল। দলের অন্য সদস্যরা হলেন- সেভ আওয়ার সি এর মহাসচিব মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, প্রাণ ও প্রকৃতি সাংবাদিক কেফায়েত শাকিল, গ্রিন ফাইটিং মুভমেন্টের সভাপতি নাবিল আহমদ, সবুজ আন্দোলনের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার ও অর্থ পরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন (রূপা)।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি হাতিসহ বন্যপ্রাণী হত্যার প্রতিবাদে গত ২৪ নভেম্বর ঐক্যবদ্ধ হয় ৭টি পরিবেশবাদী সংগঠন। তাদের সমন্বয়ে গঠিত হয় বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বিএনসিএ)। পরে এতে যুক্ত হয় দেশের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় কাজ করা ৩৩টি সংগঠন।

টিআই/এইচকে