অস্ত্র তাদের নারী কেলেঙ্কারির ভয়
অপহরণচক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপি - ছবি : ঢাকা পোস্ট
অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি। ২-৩ লাখ টাকা পেলেই ছেড়ে দেওয়া হয় ভিকটিমকে। কিন্তু তার আগে অপহরণচক্রের নারী সদস্যদের সঙ্গে তুলে রাখা হয় অশ্লীল ছবি। সেই ছবিকে পুঁজি করে দেখানো হয় নারী কেলেঙ্কারির ভয়। ভয়ের এ অস্ত্রের মুখে ভুক্তভোগীরা আর মুখ খোলেন না। পুলিশও জানতে পারে না তথ্য। ফলে নির্বিঘ্নে চলতে থাকে একের পর এক ‘অপহরণ বাণিজ্য’।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অনেক দিন ধরে সক্রিয় এ অপহরণচক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) উত্তর বিভাগের একটি দল। গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. সাদেকুল ইসলাম, মো. ইফরান, মোহাম্মদ আলী রিফাত, মো. কুতুব উদ্দিন, মো. মাসুম রানা ও গোলাম রাব্বি।
বিজ্ঞাপন
রোববার (৩১ জানুয়ারি) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, গত ২৯ জানুয়ারি উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পূর্বপাশে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন এক ব্যক্তি। এ সময় অপহরণচক্রের ৪-৫ জন সদস্য মাইক্রোবাসে করে তার কাছ আসে। পরে ভিকটিমকে সুকৌশলে গাড়িতে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে অপহরণকারীরা ভিকটিমের স্ত্রী ও বড় ভাইয়ের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করে। মুক্তিপণ পাওয়ার পর চক্রটির সদস্যরা ভিকটিমকে উত্তরার ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে ফেলে যায়।
এ ঘটনায় উত্তরা পূর্ব থানায় একটি মামলা হয়। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ডিবি উত্তর বিভাগের একটি দল এই চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে। এর আগেও এই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়ভাবে অপহরণ করে আসছিল। নানা কৌশল অবলম্বন করায় ভিকটিমরা ভয়ে পুলিশের কাছে আসত না। চক্রটি নারী সদস্যদের দিয়ে অপহৃত ব্যক্তিদের এমন কিছু অশ্লীল ছবি তুলে রাখে যার ফলে ভুক্তভোগীরা পরবর্তীতে সামাজিক লজ্জার ভয়ে আর পুলিশের আইনি সহায়তা নিত না। এছাড়া তারা ভিকটিমদের অস্ত্র দিয়ে ভয়ভীতি দেখাত, তারা যেন পুলিশের কাছে না যায়। পুলিশের কাছে গেলে ভিকটিমের অশ্লীল ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হতো।
হাফিজ আক্তার বলেন, আমরা ভুক্তভোগীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, কেউ যদি এই চক্রের মাধ্যমে অপহৃত হয়ে থাকেন তাহলে গোপনে আমাদের কাছে আসেন, আমরা ব্যবস্থা নেবো। আমরা যখন এই চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার শুরু করি তখন থেকে এ পর্যন্ত চারজন ভিকটিম আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
চক্রটি রাজধানীর কোন এলাকায় কার্যক্রম চালাচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উত্তরা ও ঢাকা দক্ষিণের কিছু এলাকায় তাদের কার্যক্রমের ছাপ আমরা পেয়েছি। আসলে ঢাকার যে এলাকায় সুবিধা পায় সেখানেই তারা অপহরণ করে। এক্ষেত্রে তারা খুবই সাধারণ মানুষদের অপহরণ করত। যাতে করে নিউজ না হয় বা কোনো আলোচনা না হয়।
এমএসি/এইচকে