মানব ও অর্থপাচারের দায়ে কুয়েতে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী শহিদুল ইসলাম পাপুলের চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের ঘটনায় পারস্যের দেশটির সঙ্গে ঢাকার কূটনৈতিক সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

রোববার (৩১ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে (বিইউপি) আন্তর্জাতিক মডেল জাতিসংঘ সম্মেলন-২০২০ শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যে কোনো বাঙালি যদি বিদেশে অপকর্ম করেন তাহলে আমরা দু঳খ পাই, আর যদি ভালো কাজ করেন আমরা খুব খুশি হই, গর্ব করি। তবে এ ইস্যুটা আমাদের এবং কুয়েতের সম্পর্কের ব্যাপারে কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ তাদের সঙ্গে আমাদের বহু পুরোনো বন্ধুত্ব।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যুগ থেকে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক- জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর যুগ থেকে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। শুধু কূটনৈতিক সম্পর্ক নয়, মিলিটারি সম্পর্ক। বহু সম্পর্ক ওদের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। এ একটা ইস্যু কোনো প্রভাব ফেলবে না।’

গত বৃহস্পতিবার কুয়েতের ফৌজদারি আদালত বাংলাদেশের সংসদ সদস্য পাপুলের বিরুদ্ধে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে লক্ষ্মীপুর–২ আসনের স্বতন্ত্র এ এমপিকে ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার জরিমানা করা হয়েছে।

মোমেন জানান, এমপি পাপুলের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কুয়েত সরকার এখনও কিছু জানায়নি। আমরা আমাদের রাষ্ট্রদূতকে কালকেও ফোন করেছি, শোনার পর ফোন করেছি।

কুয়েত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে জানালে সাজাপ্রাপ্ত এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমাদের রাষ্ট্রদূতকে বলেছি, সরকারি তথ্য নিয়ে আসতে। সেগুলো এলে পরে সংসদকে দেব, যেখানে যেখানে দেওয়ার দেব। তখন তারা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে। এগুলো না আসা অবদি আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।’

বিদেশের মাটিতে পাপুলের সাজার বিষয়টি দু঳খজনক বলেও মন্তব্য করেন মোমেন।

মানব ও অর্থপাচারের অভিযোগে কুয়েতের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) কর্মকর্তারা গত ৬ জুন শহিদুল ইসলামকে তার বাসা থেকে আটক করে।

সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পাপুলের মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি কাজ করেন বলে কুয়েতে বাংলাদেশ কমিউনিটির ধারণা।

কোম্পানির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, সেবা খাত, নিরাপত্তা, নির্মাণ, আবাসন, পরিবহন, তেল শোধন প্রভৃতি খাতে কার্যক্রম রয়েছে মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপের। কুয়েতের বাইরে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে ব্যবসায় রয়েছে তাদের।

পাপুলের বিরুদ্ধে ওঠা মানবপাচারের অভিযোগ তদন্ত হওয়ার বিষয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। সেসময় কুয়েত সিআইডির বরাত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে মানবপাচার নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে কুয়েতি পত্রিকা আল কাবাস ও আরব টাইমস।

এনআই/এসএস