ওষুধ-সরঞ্জামে অর্থ আত্মসাৎ: আজিমপুর মাতৃসদনের তত্ত্বাবধায়ককে তলব
স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের জন্য ওষুধ-সরঞ্জাম কেনার নামে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে মামলার প্রধান আসামি আজিমপুর মাতৃসদনের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ইশরাত জাহানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার (৩১ জানুয়ারি) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে সংস্থাটির উপ-পরিচালক আবুবকর সিদ্দিক স্বাক্ষরিত তলবি নোটিশে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) তাকে হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
গত ১৫ ডিসেম্বর পৃথক চারটি মামলা দায়ের করেছিলেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. আবুবকর সিদ্দিক। মামলায় ১৭ জন চিকিৎসক ও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ৮ জনকে আসামি করা হয়। মামলা দায়ের করার পরপরই আসামিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল।
আসামিরা হলেন- আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক ইসরাত জাহান, পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সাবেক অধ্যক্ষ ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য পারভীন হক চৌধুরী, মাতৃসদনের সাবেক সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য মাহফুজা খাতুন, সাবেক সহকারী কো-অর্ডিনেটর (ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ) ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য চিন্ময় কান্তি দাস, সাবেক মেডিকেল অফিসার ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম, মেডিকেল অফিসার (শিশু) ও বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য মাহফুজা দিলারা আকতার, মাতৃসদনের মেডিকেল অফিসার ও বাজারদর যাচাই কমিটি সদস্য নাজরিনা বেগম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সদস্য সচিব (বাজারদর যাচাই কমিটি) জহিরুল ইসলাম, পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য জেবুন্নেসা হোসেন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) ও বাজারদর যাচাই কমিটির সভাপতি রওশন হোসনে জাহান, মাতৃসদনের সাবেক সহকারী কো-অর্ডিনেটর (ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ) ও পরিবার পরিকল্পনার অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. লুৎফুল কবীর খান, মেডিকেল অফিসার ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য রওশন জাহান, সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক হালিমা খাতুন, মাতৃসদনের বিভাগীয় প্রধান (শিশু) ও বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য মো. আমীর হোচাইন, সাবেক সমাজসেবা কর্মকর্তা ও বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য মোছা. রইছা খাতুন ও সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া রয়েছেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী গোলাম আহসান, সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু) নাদিরা আফরোজ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. নাছের উদ্দিন, সমাজসেবা কর্মকর্তা বিলকিস আক্তার, মেডিকেল অফিসার আলেয়া ফেরদৌসি।
ঠিকাদারদের মধ্যে রয়েছেন মনার্ক এস্টাব্লিশমেন্টের মালিক মো. ফাতে নূর ইসলাম, মেসার্স নাফিসা বিজনেস কর্নারের মালিক শেখ ইদ্রিস উদ্দিন (চঞ্চল), সান্ত্বনা ট্রেডার্সের মালিক নিজামুর রহমান চৌধুরী। ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত চার অর্থবছরের কেনাকাটায় তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কার্যাদেশ অনুযায়ী ঠিকাদারকে ওষুধ সরবরাহের বিপরীতে ৩২ লাখ ৯১ হাজার ৭২০ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়। অথচ খুচরা মূল্য ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মূল্য অনুযায়ী ওই একই ওষুধের সর্বোচ্চ মূল্য ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ২৯৮ টাকা। বাকি টাকা অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছে। এভাবে চার অর্থবছরে একই প্রক্রিয়ায় ওই টাকা আত্মসাৎ হয়েছে।
গত বছরের ১২ ডিসেম্বর পৃথক পাঁচ মামলায় মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি, বাজার দর কমিটি, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ও ঠিকাদারসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের ৩২ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে আসামি করে মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে চারটি মামলা দায়ের হয়েছে।
২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর আজিমপুরের এই মাতৃসদনে রেজিস্ট্রেশন না করার অজুহাতে প্রসব যন্ত্রণায় কাতর ছিন্নমূল পারভীনকে রাস্তায় বের করে দেওয়া হয়েছিল। যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে রাস্তার ওপরেই বাচ্চা প্রসব করেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আওতাধীন হাসপাতালটি ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ ২০০০ সালে আবারও চালু করা হয়েছে।
আরএম/জেডএস