মুসলিম গ্রুপের ১৭৫ কোটি টাকা পাচার, দুদকের চিঠি
রপ্তানির আড়ালে আল মুসলিম গ্রুপের বিরুদ্ধে ১৭৫ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) অর্ধশতাধিক ব্যাংকে সংশ্লিষ্ট তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার (৩১ জানুয়ারি) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত পৃথক পৃথক চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে কমিশনের জনসংযোগ দপ্তর ঢাকা পোস্ট-কে নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
দুদকের উপপরিচালক এদিপ বিল্লার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম ওই অভিযোগ অনুসন্ধানের দায়িত্বে পালন করছেন। টিমের অন্য সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক আতাউল কবির ও বজলুর রশিদ।
অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, শতভাগ পোশাক রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান আল মুসলিম গ্রুপ। ১৬ বছর আগে বন্ড লাইসেন্স নেয়।
বিজ্ঞাপন
প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, শুল্ককর সুবিধায় আমদানি করা কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রি করেছে। আল মুসলিম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এ কে এম নিটওয়্যার লিমিটেডের বিরুদ্ধে শুল্ককর ফাঁকি ও মুদ্রা দেশে প্রত্যাবাসিত না হওয়ার রহস্য উদঘাটন করে এনবিআরের শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেট।
সবচেয়ে বেশি বন্ড সুবিধার কাঁচামালের অপব্যবহারকারী ২৯ প্রতিষ্ঠানের তালিকা করে এনবিআর। এর মধ্যে সাভারের অবস্থিত এ কে এম নিটওয়্যার লিমিটেড অন্যতম। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সালের ২৪ জুন থেকে ২০১৭ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত হিসাব নিরীক্ষা করতে বলা হয়। প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের তিনটি লিয়েন ব্যাংকের কাছে কাগজপত্র চেয়ে শুল্ক মূল্যায়ন গত এক বছরে ১৮ বার চিঠি দেয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অসহযোগিতা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
এনবিআরের নিরীক্ষা কমিটি গত ৩১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে। ওই সময় প্রতিষ্ঠানটির বন্ডেড সুবিধায় সব ধরনের ওভেন কাপড় আমদানির মাধ্যমে শার্ট, প্যান্ট ও জ্যাকেট উৎপাদনের তথ্য পায় নিরীক্ষা কমিটি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি নিরীক্ষা মেয়াদে ডিটেলস প্যাকিং লিস্ট, কাপড় ও আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদির ডেলিভারি চালান, স্থানীয়ভাবে আমদানির ক্ষেত্রে ব্যাক টু ব্যাক এলসি, পিআই, মূসক-১১ চালানসহ অন্যান্য কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।
অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, নিরীক্ষা মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটি ১০৪টি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে শুল্কমুক্ত সুবিধায় ৫১ হাজার ৬৪৪ কেজি কাপড় আমদানি করেছে, যার শুল্ককর প্রায় দুই কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এছাড়া ৭২০টি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে ৬৫ হাজার ৯৯ কেজি আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি আমদানি করেছে প্রতিষ্ঠানটি, যার শুল্ককর প্রায় ৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এসব দ্রব্যাদির ব্যবহার বা রপ্তানির কোনো কাগজপত্র প্রতিষ্ঠানটি দেখাতে ব্যর্থ হয়। অন্যদিকে ২০১৫ সালে দুটি ইউডির মাধ্যমে বন্ড সুবিধায় ৫৭ হাজার ২৪১ গজ কাপড় আমদানি করে, যার শুল্ককর প্রায় ১৮ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। নিরীক্ষা মেয়াদে এসব কাপড়ের বন্ডিং উত্তীর্ণ হওয়ার পরও প্রতিষ্ঠান শুল্ককর পরিশোধ করেনি। প্রতিষ্ঠানটির মোট ১১ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার শুল্ককর ফাঁকি উদঘাটন করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করে। নিয়ম অনুযায়ী পণ্য রপ্তানি করলে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আসার কথা। কিন্তু আল মুসলিম গ্রুপের ওই প্রতিষ্ঠানটি ২০১৫ সালের ২৪ জুন থেকে ২০১৬ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত দুই কোটি ছয় লাখ ৪৪ হাজার ৮০ ডলারের (১৭৫ কোটি ৪৭ লাখ ৪৬ হাজার ৮১৭ টাকা) পণ্য রপ্তানি করেছে। এক হাজার ৪৪১টি শিপিং বিলের বিপরীতে এ মুদ্রা দেশে আসার কথা। এ মুদ্রা দেশে আসেনি।
আরএম/এফআর