বর্গা চাষিদের ঋণ ও গ্রামে ফেরাদের ত্রাণ দেওয়ার পরামর্শ
দারিদ্র্য ও বেকারত্বের হার কমাতে কৃষি ঋণ বিতরণে বর্গা চাষিদের অগ্রাধিকার এবং গ্রামে ফেরা মানুষের জন্য ত্রাণ বিতরণে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও খাত সংশ্লিষ্টরা।
রোববার (৩১ জানুয়ারি) করোনা ও আম্ফান মোকাবিলায় ত্রাণ কর্মসূচি এবং কৃষি প্রণোদনাঃ সরকারি পরিষেবার কার্যকারিতা শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল সংলাপে এ সব কথা জানানো হয়। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি), অক্সফাম ইন বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ সংলাপটির আয়োজন করে। সংলাপটির সার্বিক সহযোগিতা করে ডাক দিয়ে যাই, পিরোজপুর এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ।
বিজ্ঞাপন
দারিদ্র্য ও বেকারত্বের হার কমানো ও প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ নিতে সংলাপে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
‘আম্ফানের’ মত দুর্যোগ মোকাবিলায় কৃষি পুনর্বাসন/প্রণোদনা কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে সরকারি সহায়তার অধিকতর কার্যকর ব্যবহার এবং অপচয় রোধে সার ও বীজের বরাদ্দের ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির নিরিখে এবং স্থানীয় কৃষকদের চাহিদা, ফসল উৎপাদনের বিন্যাস অনুযায়ী বরাদ্দ দিতে হবে।
বিজ্ঞাপন
সিপিডি নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, অক্সফাম ইন বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. দীপঙ্কর দত্ত, এবং ডাক দিয়ে যাই, পিরোজপুর সংলাপে নির্বাহী পরিচালক মো. শাহজাহান গাজী সংলাপে অংশগ্রহণ করেন।
সিপিডি’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান ও সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট, মোস্তফা আমির সাব্বিহ সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এ সময় বলা হয়, করোনা ও আম্ফান মোকাবিলায় ত্রাণ এবং কৃষি পুনর্বাসন/প্রণোদনা কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে কিছু সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ পরিলক্ষিত হয়েছে। বরাদ্দ ও বিতরণের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করা, সেবা সম্পর্কিত প্রচার প্রচারণা বৃদ্ধি করা, স্থানীয় পর্যায়ে সুবিধাভোগী নির্বাচন প্রক্রিয়া (বিশেষ করে নগদ অর্থ সুবিধার ক্ষেত্রে) অংশগ্রহণমূলক করা, ভবিষ্যতে দুই হাজার ৫০০ টাকার মতো কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে এর অধিকতর কার্যকারিতার জন্য তালিকাভুক্ত হওয়া বা সেবার শর্তের ক্ষেত্রে একাধিক বিকল্প রাখাসহ আরও পদক্ষেপ প্রয়োজনীয় করোনা মোকাবিলায় ত্রাণ কর্মসূচিকে কার্যকর করতে।
ইন্দুরকানী উপজেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, দুই হাজার ৫০০ টাকা মানবিক সহায়তা পাওয়ার যোগ্য এমন চার হাজার জনের একটি তালিকা জাতীয় পর্যায়ে পাঠানো হয়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, পাঠানো তালিকার মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০ শতাংশের কাছাকাছি মানুষ এই সহায়তা পেয়েছেন। যারা তালিকাভুক্ত কিন্তু এখনও সহায়তা পাননি তাদের সকলের কাছে দ্রুত নগদ সহায়তা পৌঁছানোর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। দুর্যোগ মোকাবিলায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচি আরও কার্যকর করার ক্ষেত্রে চাহিদা নিরূপণ এবং এর ভিত্তিতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদেরকে কৃষি প্রণোদনা সম্পর্কে জানানো ও জিও-এনজিও সমন্বয়ে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অগ্রাধিকার তালিকা প্রস্তুত করতে হবে।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সরকারি উদ্যোগ বাস্তবায়নে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় করতে হবে।
সংলাপে আলোচনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সিপিডি’র সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আলোচনাকে উৎসাহব্যঞ্জক, তথ্যভিত্তিক ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে মনে করেন।
সিপিডি সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, নাগরিক অধিকারের কথা উল্লেখ করে বলেন, এরকম সংলাপের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রয়োজন রয়েছে।
এসআই/এমএইচএন/এফআর