মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাক খাতের প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ হাজার শ্রমিক ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন। সরকার ও মালিকপক্ষের সংগঠনগুলোর দায়িত্বে অবহেলায় সামাজিক সুরক্ষা সহায়তার অর্থ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন প্রায় ১০ লাখ শ্রমিক।

বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কর্তৃক ‘তৈরি পোশাক খাতে করোনাভাইরাস উদ্ভূত সংকট: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। বৃহস্পতিবার একটি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।  

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, করোনাভাইরাস সংকটের এক বছর হয়ে যাচ্ছে। ভাইরাসটি অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। যার পরিমাণ পোশাক খাতের ওপরই সবচেয়ে বেশি।  

ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত গবেষণায় পাওয়া তথ্য বলছে, এপ্রিল মাসে কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর কারখানা লে-অফ ও শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট মালিক সংগঠন ও মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠায়। চিঠিতে বিজিএমইএ কর্তৃক কারখানার মালিকদের শ্রমিক ছাঁটাই না করে বকেয়া মজুরির কম অংশ প্রদানের নির্দেশনা দেয়া হয়। তথ্যানুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বিজিএমইএ’র ৩৪৮টি সহ মোট ১ হাজার ৯০৪টি কারখানা লে-অফ ও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এতে প্রায় ৬০-৬৫ হাজার শ্রমিক ছাঁটাইয়ের শিকার হন। কারখানাগুলো কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে একত্রে বহু সংখ্যক শ্রমিক ছাঁটাই করলেও পরে অল্প অল্প করে নিয়মিত শ্রমিক ছাঁটাই অব্যাহত রাখে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, করোনা সংকটের সময় দেওয়া প্রণোদনার প্রায় ৮৪ শতাংশ বা ৫২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা দেওয়া হয় তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের ব্যবসায়ীক স্বার্থে। কিন্তু এপ্রিল-জুলাই পর্যন্ত তৈরি পোশাক শ্রমিকদের প্রাক্কলিত বেতন-ভাতা প্রায় ১২ হাজার ৬৯২১ কোটি টাকা হলেও সরকার প্রদেয় এই প্যাকেজে প্রণোদনার পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা, যা প্রয়োজনের তুলনায় ২৭.৬ শতাংশ কম। ফলশ্রুতিতে তৈরি পোশাক খাতে কর্মরত মোট শ্রমিকের প্রায় ৪২ শতাংশ বা প্রায় ১৪ লাখ বেতন-ভাতা বাবদ সরকারি প্রণোদনার অর্থ পায়নি।

গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এখনও ৬৪টি কারখানার বিরুদ্ধে ২১ হাজার শ্রমিকের বেতন-ভাতা না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আবার সাব-কন্ট্রাক্টের কারখানাগুলোর জন্য কোনো নির্দেশনা না থাকায় ৩ হাজার কারখানার প্রায় ১৫ লাখ শ্রমিকের বেতন-ভাতা পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

টিআইবি বলছে, সরকার ও মালিকপক্ষের সংগঠনগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের তালিকা প্রণয়নে অনাগ্রহ ও দায়িত্বে অবহেলা ছিল। ফলে সম্ভাব্য সুবিধাভোগী প্রায় ১০ লাখ শ্রমিক সামাজিক সুরক্ষা সহায়তা এখনও পায়নি। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র বাইরে থাকা কারখানা ও এর শ্রমিকদের বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। প্রণোদনার অর্থ প্রাপ্তিতে বড় কারখানাগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বড় কারখানার মালিকদের বিরুদ্ধে প্রণোদনা প্রাপ্তিতে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার ও তদবিরের অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া ব্যাংক হতে অর্থ ছাড়ের পদ্ধতিগত জটিলতার জন্যও টাকা পেতে বেশি সময় ব্যয় হয়।

আরএম/এমএইচএস