মিয়ানমারের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে ঢাকা ও নেইপিডোর মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক নিয়ে অনিশ্চতয়া দেখা দিয়েছে। বৈঠকটি আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) চীনের মধ্যস্থতায় ভার্চুয়ালি হওয়ার কথা ছিল।

মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এসব তথ্য জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘মিয়ানমারের সম্প্রতি ক্ষমতার যে রদবদল হয়েছে এ পরিস্থিতিতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় না। আমরা চীনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের আলাপ হয়েছে। আমরা ডিডি পর্যায়ের এ মিটিংয়ের জন্য মিয়ানমারের ফিডব্যাকের দিকে তাকিয়ে আছি।’

গত ১৭ জানুয়ারি চীনের মধ্যস্থতায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বসে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি ওয়ার্কিং কমিঠির বৈঠক নিয়ে দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমাদের মিয়ানমারের সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। দেশটিতে যারাই ক্ষমতায় থাকুক তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক থাকবে। আমাদের মনে হয় না তাদের ক্ষমতার যে রদবদল হয়েছে তাদের সঙ্গে আমাদের কাজ করতে অসুবিধা হবে। কারণ দেশটি অধিকাংশ সময় সেনাশাসিত ছিল, তখন বাংলাদেশ তাদের সঙ্গে কাজ করেছে।’

রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেশটির সেনাসমর্থিত সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে কি না- জবাবে সচিব বলেন, ‘আমরা শুনেছি, তাদের মন্ত্রিসভা ভেঙে নতুন করে ১১ জনকে আনা হয়েছে। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয়, তাদের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য কিছুটা সময় দেওয়া দরকার।’

মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে আজ মঙ্গলবার জরুরি বৈঠকে বসেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৈঠকে ঢাকার পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ইস্যু তোলা হবে জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘জাতিসংঘে বৈঠকটি আগেই নির্ধারণ ছিল। তবে মিয়ানমারের পরিস্থিতির কারণে বৈঠকটি এগিয়ে আনা হয়েছে। জাতিসংঘে আমাদের রাষ্ট্রদূতকে বলেছি, বৈঠকে সম্প্রতি ইস্যুটির কারণে যেন রোহিঙ্গা ইস্যু চাপা না পড়ে যায়। আমরা রোহিঙ্গা ইস্যুতে গুরুত্বসহকারে তুলে ধরতে বলেছি।’

গত কয়েকদিন ধরেই মিয়ানমারে বেসামরিক সরকার ও ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর মধ্যে টানটান উত্তেজনা চলছিল। সেনাবাহিনী আগে থেকেই অভিযোগ করছিল, গত নির্বাচনে জালিয়াতি করে ক্ষমতায় এসেছে সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি)। অবশেষে সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) অং সান সু চিসহ দলটির অন্যান্য জ্যেষ্ঠ নেতাদের গ্রেপ্তার করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। এ ঘটনায় মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা করা হয়েছে।

গত ১৭ জানুয়ারি চীনের মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রত্যাবাসন শুরুতে ঢাকার দেওয়া প্রস্তাবে একমত হতে পারেনি মিয়ানমার। তবে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু আশা করছিল ঢাকা।

ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পর প্রত্যাবাসন নিয়ে নেইপিদোর পক্ষ থেকে ইতিবাচক বার্তাও আসে। এরই প্রেক্ষিতে রোববার (৩১ জানুয়ারি) পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানান, কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। তবে মিয়ানমারের পাঠানো তালিকা নিয়ে স্পষ্ট কোনো বার্তা দেননি মন্ত্রী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারের কাছ থেকে কিছু পজিটিভ রেসপন্স পাওয়া গেছে। তারা কিছু রোহিঙ্গা নেবে। আমরা এখন ঐকমত্যে পৌঁছেছি। তারা একটা সংখ্যা দিয়েছে। এটা তো একদিনে যাবে না। নেওয়ার প্রসেসটা শুরু হবে। মোটামুটি আমরা চাই প্রত্যাবাসন শুরু হোক।’

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।

এনআই/এফআর/এসএম