রাজধানী থেকে ভুয়া ল্যান্ড ম্যাজিস্ট্রেট ও অস্ট্রেলিয়ায় পোর্টে চাকরি দেওয়ার নামে অর্থ আত্মসাৎকারী এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তার নাম মির্জা মুকুল (৪৫)। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সিআইডি জানায়, মির্জা মুকুল দীর্ঘদিন ধরে স্বপ্নবাজ বেকারদের অস্ট্রেলিয়ার পোর্টে চাকরি দেওয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন।

বুধবার (১৯ জানুয়ারি) সিআইডির মালিবাগ কার্যালয়ে এবিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। এসময় সংস্থাটির অতিরিক্ত ডিআইজি (ঢাকা মেট্রো) ইমাম হোসেন বলেন, মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) রাতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ৪৩৫ বাড়ির দ্বিতীয়তলা থেকে মির্জা মুকুলকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত সাপেক্ষে জানা যায়, মুকুল ও পলাতক অন্য আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। তারা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিতে ট্রেনিং করিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পোর্টে চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করে প্রত্যন্ত গ্রামের সহজ সরল লোকজনদের প্রতারিত করে টাকা আত্মসাৎ করে।

সম্প্রতি আবদুল কাদের নামে একজন ভুক্তভোগীর মামলার বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে মুকুলকে গ্রেফতার করা হয়।

সিআইডি জানায়, আবদুল কাদের ও মির্জা মুকুল একই এলাকায় থাকায় তাদের প্রায়ই দেখা হতো। এসময় মুকুল নিজেকে ল্যান্ড ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে পরিচয় দিত। বাদীকে জানায় যে, তার সঙ্গে সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানাশোনা আছে। তার কাছে সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়ায় লোক পাঠানোর নির্ভরযোগ্য মাধ্যম আছে এবং এই বিষয়ে বাদীর পরিচিত বন্ধু ও স্বজনদেরকে সরকারি খরচে পাঠানোর প্রস্তাব করে। যাদেরকে পাঠানো হবে তারা মেরিন টু মেরিন অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়ার শিপিং পোর্টে কাজ করবে।

ওই প্রতারক আরও ভুক্তভোগীদের জানায়, অস্ট্রেলিয়া পৌঁছাতে একজনের মোট ৮ লাখ টাকা খরচ হবে। যাদেরকে পাঠানো হবে তাদের প্রথমে চট্টগ্রাম মেরিনে এক মাসের ট্রেনিং করতে হবে। এভাবে সে ভিকটিমসহ কয়েকজনের মাধ্যমে ৩৬ জনকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর জন্য সংগ্রহ করেন। তাদের কাছ থেকে মোট ৫৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা আদায়ও করেন। তবে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর কোনো অগ্রগতি জানাতে পারেননি। পরে তার প্রতারণার বিষয়টি জানতে পারেন ভিকটিমরা। 

সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি (ঢাকা মেট্রো) ইমাম হোসেন জানান, মুকুল আগে ওমান থাকতেন। তিনি ৯ বছর ওমানের সালাহ সি পোর্টে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকে মেরিনভিত্তিক প্রতারণার পরিকল্পনা করেন। ভুয়া কাগজপত্র তৈরিতেও দক্ষ তিনি।

এই চক্রের অন্যান্য সদস্য গ্রেফতার ও প্রতারণার মাধ্যমে নেওয়া অর্থ উদ্ধারের চেষ্টায় তদন্ত অব্যাহত আছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

গ্রেফতারের সময় মুকুলের কাছ থেকে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিতে ট্রেনিং করিয়ে অস্ট্রেলিয়া পোর্টে চাকরিতে নিয়োগের জন্য ২৬টি পাসপোর্ট, ৩টি অটোসিল, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি ট্রেনিং পাসের কার্ড ৩৫টি, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি ট্রেনিংয়ের ভুয়া যোগদানপত্রের কপি ৭টি, বাংলাদেশ সরকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর লেখা ও ছবি সম্বলিত পাসপোর্টের আবেদন ফরম ২৫টি, মেরিন একাডেমি চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থির চিত্র ১৫টি, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

এআর/জেডএস