কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রায় দশ লক্ষাধিক বাঙালির উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণের ৪৯ বছর পূর্তি দিবসে সেখানে দাঁড়িয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের গভীরতাতেই দু’দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভব’। 

শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের সহায়তায় ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি স্মরণে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।

সম্মানীয় অতিথি হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি, বিশেষ অতিথি হিসেবে ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান ও তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাইমুম সারওয়ার কমল কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

মুক্তিযুদ্ধে বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের অবদান স্মরণ করেই এদিনের আয়োজন, উল্লেখ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান বলেন, ‘যে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, মানবিক-অর্থনৈতিকসহ সব সূচকে; সেই পাকিস্তানকে অনেক পেছনে ফেলে আমরা এগিয়ে গেছি। আজ পাকিস্তানের জনগণ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নতি দেখে হা-হুতাশ করে, তারা বাংলাদেশের মতো হতে চায়, এখানেই স্বাধীনতার বিরাট স্বার্থকতা।’

সুব্রত মুখার্জি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু পশ্চিমবঙ্গের কাছের মানুষ ছিলেন। ১৯৭২ সালের সেদিন দুপুর একটার মধ্যে কানায় কানায় ভরে গিয়েছিল ব্রিগেড। তিনটার সময় রাজভবন থেকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ইন্দিরা গান্ধী এই ব্রিগেডে আসেন। আমি তখন মঞ্চের নিচে ছিলাম। এটা আজ পর্যন্ত আমার দেখা ব্রিগেডে সর্বকালের সেরা জনসমাবেশ।’

১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রায় দশ লাখ মানুষের সমাবেশে ভাষণ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী সেই ভাষণে ছিল স্বাধীনতার আনন্দ, স্বজন হারানোর বেদনা, ভারতের প্রতি অকুণ্ঠ কৃতজ্ঞতা ও চিরঞ্জীব সম্প্রীতি আর স্বাধীনতাবিরোধীদের সমালোচনা। তিনি বলেছিলেন ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চিরদিন অটুট থাকবে’।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য ভূমিকার জন্য মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননাপ্রাপ্ত ভারতীয় গুণীজনদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন ড. হাছান মাহমুদ ও সুব্রত মুখার্জি।  

মৈত্রী সম্মাননা ভূষিতদের মধ্যে জাদুকর প্রদীপ চন্দ্র সরকার, সাংবাদিক মানস ঘোষ, সুখরঞ্জন দাসগুপ্ত, পঙ্কজ সাহা, দিলীপ চক্রবর্তী, মানবাধিকার কর্মী উৎপলা মিশ্রা, অধ্যাপক জিষ্ণু দে ও তার স্ত্রী মীরা দে, প্রণবরঞ্জন রায়, ভাষাবিদ পবিত্র সরকার এসময় উপস্থিত ছিলেন। 

পাশাপাশি কালজয়ী কবি গোবিন্দ হালদার, কালজয়ী গায়ক মান্না দে, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ রায়, কংগ্রেস নেতা বিজয় সিং নাহার, উপন্যাসিক মৈত্রী দেবী, সমাজসেবী লেডি রানু মুখার্জি, সমাজসেবী ইলা মিত্র, সাংবাদিক পান্নালাল দাশগুপ্ত, বাম নেতা রনেন মিত্র, আকাশবাণী ঘোষক দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিক দিলীপ চক্রবর্তী, সাংবাদিক উপেন তরফদার, গায়ক অংশুমান রায়, সাংবাদিক দিলীপ মুখার্জি, লোকসভা ও রাজ্যসভার সাবেক সাংসদ ও সমাজসেবী ফুলরেনু গুহ, সাংবাদিক বাসব সরকার নিবেদিতা নাগ ও নেপাল নাগের মত মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা প্রাপকদের পরিবারের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন ড. হাছান ও সুব্রত মুখার্জি। অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে দিবসটি উপলক্ষে কলকাতা উপ-হাইকমিশন প্রকাশিত স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করেন তারা।

মুক্তিযুদ্ধে জীবনদাতা ভারতীয় দুই সাংবাদিকের স্মৃতিফলক উন্মোচন
দুপুরে প্রেসক্লাব কলকাতা চত্বরে বাংলাদেশের  মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী পশ্চিমবঙ্গের সাংবাদিক দীপক বন্দোপাধ্যায় ও সুরজিত ঘোষালের স্মৃতিফলক উন্মোচন করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। প্রেসক্লাব কলকাতার সভাপতি স্নেহাশিস সুর ও সচিব কিংশুক প্রামাণিক এসময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন।

এসময় তিনি বলেন, রাজনৈতিক সীমারেখা বিভক্ত করলেও বাংলাদেশ-ভারত এই দু’দেশের মানুষের মনকে বিভক্ত করা যায়নি। রক্তের অক্ষরে লেখা দু’দেশের এই গভীর সম্পর্কের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

এর পরপরই কলকাতার পিয়ারলেস হোটেলে বাঙালির বিশ্বমঞ্চ হিসেবে খ্যাত ওয়েবসাইট ‘বাংলা ওয়ার্ল্ড ডট কম’ আয়োজিত আলোচনায় কলকাতা ও মুম্বাই হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চিত্ততোষ মুখার্জিসহ সুধীজনদের সাথে মতবিনিময় করেন ড. হাছান। 

মন্ত্রীর সফরসঙ্গী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, সফররত তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, বিশিষ্ট সাংবাদিক সন্তোষ শর্মা, সুভাষ সিংহ রায়, বাংলাদেশ হাইকমিশন দিল্লির প্রেস মিনিস্টার শাবান মাহমুদ ও অভিনয় শিল্পীসহ বিশিষ্টজনেরা এসব অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

পিএসডি/জেডএস