চট্টগ্রামের খুলশী থেকে মজিবুর রহমান হান্নান (২৮) নামে এক ব্যক্তিকে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার ভোরে ওই থানার ঝাউতলা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ বলছে, হান্নান ব্যবসায়ী সেজে পণ্য সরবরাহের কথা বলে অর্থ আত্মসাৎ করতেন। এছাড়া নিজেই ব্যাংক কর্মকর্তা সেজে ব্যাংকের ভুয়া ক্যাশ স্লিপ, সিল ব্যবহার করে নিজেই ক্যাশ অফিসার সেজে টাকা হাতিয়ে নিতেন।

বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করে পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বলেন, ম্যাক্স গ্রুপের প্রায় ৪ মেট্রিকটন এমএস প্লেট আত্মসাতের অভিযোগে  পতেঙ্গা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলার  তদন্ত করতে গিয়ে হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি বলেন,  হান্নান একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ পাস করা একজন শিক্ষিত বেকার। ট্রান্সপোর্টের ব্রোকার হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে মালামাল পরিবহনের জন্য গাড়ি সরবরাহ করতেন। গত ১১ জানুয়ারি পতেঙ্গার ম্যাক্স গ্রুপের হর্স ইয়ার্ড থেকে ১৭ হাজার ৩০০ কেজি এমএস প্লেট মানিকগঞ্জের ম্যাক্স ইনফ্রা ফ্যাক্টরিতে নেওয়ার জন্য হান্নানের কাছ থেকে দুটি গাড়ি ভাড়া করেন ম্যাক্স গ্রুপের এক কর্মকর্তা । 

এর মধ্যে একটি ট্রাক মালসহ মানিকগঞ্জে গন্তব্য পৌঁছে।  চার হাজার ১৬০ কেজি এমএস প্লেট বহনকারী অপর পিকআপটি গন্তব্যে না পৌঁছালে ম্যাক্সের পক্ষ থেকে হান্নানের সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।  তিনি জানান, পিকআপটি পথিমধ্যে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে।  দুদিন পরেও মাল নিয়ে গাড়িটি মানিকগঞ্জে ম্যাক্স ফ্যাক্টরিতে না পৌঁছালে হান্নান জানান, চালক মালামাল  অন্য কোথাও বিক্রি করে পালিয়ে গেছে। 

তবে চার হাজার ১৬০ এমএস প্লেটের মূল্য হিসাবে চার লাখ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেন হান্নান। এ লক্ষ্যে একটি অ্যাকাউন্ট নাম্বার দেওয়ার জন্য ম্যাক্সকে অনুরোধ করেন তিনি। তার অনুরোধে ম্যাক্স কোম্পানি তাদের ইউসিবিএল ব্যাংকের হিসাব নাম্বার দেয়। 

কিছুক্ষণ পর হান্নান সিটি ব্যাংকের অ্যাপস থেকে আসা ফান্ড ট্রান্সফারের একটি মেসেজের স্ক্রিনশট দেন। ম্যাক্স কর্তৃপক্ষ ব্যাংকে যাচাই করে  জানতে পারে, কোনো টাকা ক্যাশ ইন হয়নি। পরে যোগাযোগ করলে হান্নান মোবাইল বন্ধ করে দেন। এ ঘটনায় মামলা করলে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মজিবুরের বাসা তল্লাশি করে ইসলামী ব্যাংকের জাল বক্স সিল ও স্লিপ উদ্ধার করা হয়েছে। 

পুলিশ কর্মকর্তা কবির হোসেন বলেন, হান্নান নিজেকে সাপ্লাই ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মালামাল সরবরাহের অর্ডার নিতেন। অগ্রিম হিসাবে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা সংগ্রহ করতেন। কিন্তু মালামাল সরবরাহ না করে সময়ক্ষেপণ করতেন । গ্রাহক যখন মালের জন্য তাগিদ দিত, তখন তিনি তাদের বলতেন, মাল পৌঁছাতে দেরি হবে। প্রয়োজনে টাকা ফেরত দিতেও রাজি। এই বলে তিনি ব্যাঙ্কের স্লিপে সিল দিয়ে ছবি তুলে পাঠিয়ে বলতেন টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

জাল সিল হেফাজতে রেখে নিজেকে ক্যাশ অফিসার হিসাবে উপস্থাপন করে প্রতারণা করার দায়ে পতেঙ্গা মডেল থানার এসআই মোহাম্মদ শাহাদাত হোছাইন বাদী হয়ে হান্নানের বিরুদ্ধে খুলশী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।  

পুলিশ জানায়, ম্যাক্সের কাছ থেকে আত্মসাত করা এমএস প্লেটগুলো সাগরিকা রোডের এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেছিলেন। এগুলো বিক্রি করতে গিয়েও প্রতারণায় আশ্রয় নিয়েছিলেন সে। তিনি মেসার্স হোসেন ট্রেডিং করপোরেশন চট্টগ্রামের প্যাডে ভূয়া ক্রয় রশিদ,  ডেলিভারি চালান, ভুয়া ওয়েবিল ও ভুয়া কম্পিউটার স্কেল শ্লিপ তৈরি করে বৈধ মাল হিসেবে প্লেটগুলো বিক্রি করেন।

পতেঙ্গা মডেল থানার এসআই মোহাম্মদ শাহাদাত  বলেন, মামলা তদন্ত করতে গিয়ে আমরা জানতে পারি, নগরীর সিটি গেটের নিউ বিসমিল্লাহ ফার্নিচার এন্টারপ্রাইজের মালিক আলমগীর নামে এক ব্যক্তিও হান্নানের প্রতারণার শিকার। খাট সরবরাহের কথা বলে তার কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা নেন। কিন্তু পরে সেটা সরবরাহ না করে একই প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে সেই টাকা আত্মসাৎ করেন। আকবর শাহ থানায়  হান্নানের বিরুদ্ধে এ ঘটনায় মামলা আছে।

ওসি কবির হোসেন  বলেন, সম্প্রতি আট লাখ টাকা লোকসান হওয়ায় সেই ঘাটতি পূরণে হান্নান প্রতারণা শুরু করেছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।

কেএম/আরএইচ