বন বিভাগের আড়াইলাখ একর ভূমি দখল করে আছে প্রায় দেড় লাখ দখলদার। এ ভূমি উদ্ধারে দেশের বিভিন্ন আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। অবৈধভাবে দখল করা এসব ভূমি উদ্ধারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করার সুপারিশ করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। 

রোববার (০৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদ ভবনে কমিটির ১৮তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বন বিভাগের বেদখল হওয়া জায়গা ও দখলদারদের একটি তালিকা উপস্থাপন করা হয়।

তালিকায় জানানো হয়, সারাদেশের জবরদখল করা ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬১৩.০৬ একর সংরক্ষিত বনভূমির দখলদারদের সংখ্যা ৮৮ হাজার ২১৫ জন এবং জবরদখল করা ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৪৫.৭৮ একর অন্যান্য বনভূমির দখলদারদের সংখ্যা ৭২ হাজার ৩৫১ জন। এ হিসেবে দেখা যায়, বন বিভাগের ২ লাখ ৫৭ হাজার ১৪৮ একর ভূমির দখলে রয়েছে‌ ১ লাখ ৬০ হাজার ৫৬৬ দখলদার।

কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, ২৯৯ জন দখলদার এক হাজার ৭২১ দশমিক ৮৯ একর জমি দখল করে শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা নির্মাণ করেছেন। এর মধ্যে ১৭২ জন দখলদার ৮২০ দশমিক ৩৪ একর সংরক্ষিত বন এবং ১২৭ জন দখলদার ৯০১ দশমিক ৫৫ একর সংরক্ষিত নয় এমন অন্যান্য বনের জমি দখল করেছেন।

প্রতিবেদন মতে, পাঁচ হাজার ৫৫৬ জন দখলদার ১৩ হাজার ৪৩৫ দশমিক ১৯ একর বনের জমি দখল করে হাটবাজার, কটেজ, রিসোর্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি স্থাপনা তৈরি করেছে। এক লাখ ১০ হাজার ৮৩৬ জন দখলদার এক লাখ ৮ হাজার ৪৫৭ দশমিক ৮৯ একর জমি দখল করে ঘরবাড়ি তৈরি করেছে। এছাড়া ৪৩ হাজার ৮৭৫ জন দখলদার এক লাখ ৩৩ হাজার ৫৪৩ দশমিক ৬৭ একর বনের জমি দখল করে কৃষি, বাগান, চারণ ভূমি, লবণ চাষ ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, আমরা সারাদেশের বনভূমি দখলদার ও দখলীয় জমির একটি পূর্ণাঙ্গ তথ্য পেয়েছি। এসব জবর দখলীয় জমি উদ্ধারে কী কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে সেটাও আমাদের জানিয়েছে।

সংসদীয় কমিটির তৎপরতায় মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে জানিয়ে সাবের হোসেন বলেন, এরইমধ্যে ৫০০ একরের মতো জমি উদ্ধার করা হয়েছে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। এছাড়া উদ্ধারের জন্য দেশের সব জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ নাগাদ বেদখল হওয়া এসব জমির বড় একটি অংশ উদ্ধার দেখতে পাব। এ সময় তিনি বেদখল হওয়া বনের জমি উদ্ধার ও ভবিষ্যতে যাতে বেদখল হতে না পারে সেজন্য আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব দেন।

ভূমি সচিবদের রোববারের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। বন ও ভূমি মন্ত্রণালয় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ হিসেবে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। পরিবেশ ও বণ মন্ত্রণালয়কে আগামী বৈঠকে এ বছরের উদ্ধার কার্যক্রমের টার্গেট জানাতে বলা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

জানতে চাইলে কমিটির সদস্য তানভীর শাকিল জয় ঢাকা পোস্টকে বলেন, যে স্থাপন করা হয়েছে তাতে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নাম উল্লেখ করা হয়নি। ওখানে ক্যাটাগরি করে দেওয়া হয়েছে কল-কারখানা বা প্রতিষ্ঠান দখল করা জমি কত একর, কৃষিকাজ বা গৃহনির্মাণ করে দখল করা কত একর। এই জমিগুলো অবমুক্ত করতে কতগুলো মামলা চলমান আছে সেই তালিকা দেওয়া হয়েছে। 
 
কমিটি বন অধিদপ্তরের অধীন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মতৎপরতা নিয়মিত তদারকি করতে সুপারিশ করে। 

বৈঠকে জানানো হয়, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত এক হাজার ২৮৬টি অভিযান পরিচালনা করে দুই হাজার একটি মামলা দায়েরের মাধ্যমে ৩১ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করে ২৮ কোটি ৪৭ লাখ ৩৫ হাজার ৪০০ টাকা আদায় ও ১৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়াসহ ৫৪২টি ইটভাটা উচ্ছেদ/আংশিক ভেঙে ফেলা হয়েছে।

সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে কমিটি অবৈধ দখল করা বনভূমি উদ্ধারে একটি প্ল্যান অফ এ্যাকশন গ্রহণ করতে এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান/কলকারখানা স্থাপনে যে বনভূমি অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে সেগুলো উদ্ধারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করতে সুপারিশ করে। 

কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটি সদস্য পরিবেশন, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, তানভীর শাকিল জয়, জাফর আলম, মো. রেজাউল করিম বাবলু এবং খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন অংশগ্রহণ করেন।

এইউএ/জেডএস