ছবি : সংগৃহীত

আমার বাংলা পপ গান শোনার শুরু ছেলেবেলায়। ফেরদৌস ওয়াহিদ, ফিরোজ সাঁই, ফকির আলমগীর, পিলু মমতাজ, নাজমা জামান, আজম খান এবং আরও বেশকিছু নাম হৃদয়ে গাঁথা।

১৯৮৬। অবসকিওর ব্যান্ডের মাধ্যমে আমার গানের ভুবনে পদচারণা শুরু। বিভিন্ন কনসার্টে লাইভ শো করতাম। লাইভ শো শুরুর একটা সময় ওনাদের কোনো না কোনো গান গাইতে হতো। আজম খানের গান না গাইলে শো শেষ করা যেত না। বিশেষ করে চট্টগ্রামে তার গানের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি ছিল।

আজম খানের ‘রেল লাইনের ঐ বস্তিতে’, ‘আমি যারে চাইরে’, ‘পাপড়ি কেন বোঝে না’, ‘চুপ চুপ চুপ অনামিকা চুপ’, ‘আসি আসি বলে তুমি আর এলে না’ গানগুলো তখন সবার মুখে মুখে। অবসকিওর যখন আজম খানের গান গাইতো তখন দর্শকরা উল্লাসে ফেটে পড়তেন।

সবাই একসাথে গাইতেন এসব গান। সে সময়কার প্রায় সব ব্যান্ডই এই গানগুলো গাইত, দর্শকদের তুমুল অনুরোধের মুখে না করা যেতো না। সম্ভব ছিল না।

আজ মনে পড়ছে, বহু আগে একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার বিল্ডিং-এর মাঠে বামবা’র শো-তে আমরা সবাই ডানোর টিন হাতে নিয়ে আজম ভাইয়ের জন্য চাঁদা তুলেছিলাম, ওনার শরীর খারাপ ছিল তখন।

আজম খানের ‘রেল লাইনের ঐ বস্তিতে’, ‘আমি যারে চাইরে’, ‘পাপড়ি কেন বোঝে না’, ‘চুপ চুপ চুপ অনামিকা চুপ’, ‘আসি আসি বলে তুমি আর এলে না’ গানগুলো তখন সবার মুখে মুখে। অবসকিওর যখন আজম খানের গান গাইতো তখন দর্শকরা উল্লাসে ফেটে পড়তো।

কিছুদিন আগে জানতে পারি, ‘আমি যারে চাইরে’ গানটি ফিডব্যাক-এর লাবু রহমানের লেখা আর সুর করা। কতবার যে এই গান গেয়েছি, তখন জানতাম না। আমার ধারণা, এখনো অনেকেই জানেন না।

আজম খানকে বিভিন্ন কনসার্টে গান পরিবেশন করতে দেখেছি। তবে খুব কাছ থেকে মেলামেশা করা হয়নি। তাই হয়তো সে সময়ে জানাও হয়নি যে কত সাহসী একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তিনি। অনেক পরে জেনেছি।

অবসকিওর যখন থেকে দেশ, একাত্তর, মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে গান তৈরি করা শুরু করল তখন ধীরে ধীরে ক্র্যাক প্লাটুনের মতো সাহসী গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের কথা জানা শুরু করলাম। ক্রমশ আজম খানের বীরত্বগাথা জানা শুরু করলাম। এরপর থেকে শুধু গায়ক নয় একজন মানুষ হিসেবেও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে যায় অসীম।

সবার জানা দরকার যে, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় আজম খান পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তখন তিনি ‘ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী’র সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং শাসক ও শোষণের বিরুদ্ধে গণসঙ্গীত  পরিবেশন করতেন।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় আজম খান পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তখন তিনি ‘ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী’র সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং শাসক ও শোষণের বিরুদ্ধে গণসঙ্গীত পরিবেশন করতেন।

১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হলে আজম খান পায়ে হেঁটে আগরতলা চলে যান। প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন ভারতের মেলাঘরে। এরপর তিনি ঢাকায় গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য আসেন।

আজম খান ছিলেন দুই নম্বর সেক্টরের একটা সেকশনের ইন-চার্জ আর মুক্তিবাহিনীর ২ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন কর্নেল খালেদ মোশাররফ। ঢাকায় সেকশন কমান্ডার হিসেবে ঢাকা এবং এর আশেপাশে বেশ কয়েকটি গেরিলা আক্রমণে অংশ নেন আজম খান।

একজন মানুষ অমর হয়ে থাকেন তার কর্মে। আমাদের পপ সম্রাট তার কর্ম দিয়ে অমর হয়ে আছেন এই দেশের মানুষের অন্তরে। এক সম্পূর্ণ জীবন সমৃদ্ধ হয়েছে তার গানে এবং তার দেশপ্রেমে। অশেষ শ্রদ্ধা জানাই পপ সম্রাট আজম খানের জন্মদিনে।

সাইদ হাসান টিপু ।। সংগীতশিল্পী