ছবি : সংগৃহীত

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস প্রতি বছর আসে, এবারও ৭ এপ্রিল পালন করা হচ্ছে ‘আমাদের পৃথিবী, আমাদের স্বাস্থ্য’-  এ প্রতিপাদ্য নিয়ে। মূলত পৃথিবীর স্বাস্থ্যের সাথে মানুষের স্বাস্থ্যের যে সংযোগ রয়েছে তাকে অধিক গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে এখানে।

আমরা গত কয়েক বছরে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখতে পেয়েছি, এমনকি কোভিড-১৯ এর মতো রোগ যা মূলত পরিবেশ ও জলবায়ুর প্রভাবেই হয়েছে এবং আমরা যে আমাদের পৃথিবীর স্বাস্থ্যের অবহেলা করেছি তার প্রমাণ বহন করে। এছাড়া  শুধুমাত্র কোভিডের মতো অতিমারি রোগ নয়, ক্যান্সার (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে প্রধান ক্যান্সারসমূহের প্রাদুর্ভাব দাঁড়িয়েছে - ব্রেস্ট ক্যান্সার ৮.৫০%, সার্ভিকাল ৫.৪০%, ফুসফুস ৮.২০% এবং ওরাল ৮.৯০%), শ্বাসতন্ত্রের রোগ (২.৯৫%, ২০১৬) এবং পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ (প্রতি বছর প্রায় শত হাজার মৃত্যুর কারণ) বেড়েই চলেছে।

পরিবেশের দিকেও আমরা কোনো নজর দিচ্ছি না। এখানে মনে রাখা খুবই প্রয়োজন যে পৃথিবীটা শুধু মানব জাতির জন্য না, পৃথিবীটা সকল জীব ও উদ্ভিদেরও। আমরা পরিবেশ ধ্বংস করার মাধ্যমে সকল প্রাণীকূলের সাথে যে যুদ্ধ শুরু করেছি তাতে নিশ্চিত রূপে আমরাই পরাজিত হব, এতে কোনো সন্দেহ নাই। আমাদের জয়ী হতে হলে পৃথিবীর যত্ন নিতে হবে। উন্নয়নের নামে আমরা যদি পৃথিবীর পরিবেশের কথা ভুলে যাই তবে সে উন্নয়ন টেকসই হবে না। টেকসই উন্নয়নের মূল স্তম্ভগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে জলবায়ু ও পরিবেশ একটি প্রধান স্তম্ভ। যেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এগোতে বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা কতটুকু তার বাস্তবায়ন করতে পেরেছি, সেটা আঙ্গুল তুলে স্মরণ করিয়ে দেওয়াই এবারের স্বাস্থ্য দিবসের উদ্দেশ্য। সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য এবং এর কোনো বিকল্প নাই।

এ বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চেয়েছেন যেন একইসাথে মানুষের ও পৃথিবীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা হয়। সংস্থাটি বলছে, প্রতি বছর এক কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ মারা যায় বিভিন্ন রকম পরিবেশগত কারণ। যা আমরা চাইলেই কমিয়ে আনতে পারি। আমাদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোই পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত সমস্যার দিকে আমাদের ধাবিত করছে।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর ৯০% মানুষই দূষিত বায়ু গ্রহণ করে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মশা বাহিত রোগগুলো অতিদ্রুত বেড়ে চলেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদীর ভাঙন এবং বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সমুদ্রের তলা থেকে বাসার পাশের ড্রেন পর্যন্ত ভর্তি হয়ে আছে প্লাস্টিকের বোতলে। যা আমরা খাদ্যের আধুনিকতার জন্য ব্যবহার করছি। প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, নানা পানীয়সহ অখাদ্য-কুখাদ্য খাইয়ে ব্যবসা নির্ভর খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলে মানুষের মধ্যে হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগ বাড়িয়ে তুলছি। ফলে বেড়ে যাচ্ছে চিকিৎসা ব্যয়। চিকিৎসা নিয়ে যারা ব্যবসা করছে তাদের সুদিন এনে দিচ্ছে— এটা কাম্য নয় কারোরই।

এসকল অব্যবস্থাপনার জন্য সরকারের ব্যয়ই শুধু বাড়ছে না, সাথে বাড়ছে জনগণের ভোগান্তি। কারণ, দুর্নীতি এখন সর্বজনীন ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। এজন্য সামাজিক মূল্যবোধ ও মানবিকতার উন্নয়নকে প্রাধান্য দিতে হবে। শুধু দিবস পালন নয়, শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এককভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালন নয়, বরং সকল মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে মানুষের স্বাস্থ্য ও পৃথিবীর স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য। আমাদের প্রয়োজন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি মানবিক গুণাবলি নির্ভর অর্থনৈতিক উন্নয়ন। সুস্বাস্থ্যের বিকল্প কোনো উন্নয়ন যেন আইনগতভাবে অনুমোদিত না হয়। আমরা সরকারের সুচিন্তিত মানবিক সমাজ তৈরিতে এবং উন্নয়নে অংশীদার হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস সফল হোক, পৃথিবী বাঁচুক, মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হোক।

ডা. শামীম তালুকদার
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এমিনেন্স এসোসিয়েটস ফর সোসাল ডেভেলপম্যান্ট